অবতক খবর,২৭ মার্চ,মলয় দে,নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুরে দুদিন ধরে আয়োজিত হলো কথ্থক নাচের ওয়াকসপ। আগামীকাল এই ওয়াকসপ থেকে মনোনীতদের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরী হলে।
সমগ্র ব্যবস্থাপনা করেছেন শান্তিপুর গোবিন্দপুরের একটি নাচের স্কুল পায়েল মিত্র কেন্দ্র। দায়িত্বে থাকা পূর্ণিমা মন্ডল বলেন, দুদিনে শতাধিক আগ্রহী নৃত্য শিল্পীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কত্থক শিল্পী দেবেশ মুরচন্দনি গুরুজিৎ সান্নিধ্যে। তবে পূর্ণিমা দেবী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন শান্তিপুরের বিভিন্ন নাচের স্কুলকে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও দু-একজন বাদ দিয়ে কেউই আসেনি। ছেলেদের উপস্থিতি নেই বলেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে মহিলা নৃত্যশিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং আগ্রহ দেখে তিনি আশাবাদী আগামীতে কথক নাচের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
দেবেশ মুরচন্দনি জী জানান, আগে এই বিশেষ ধরনের নাচ শেখার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও তথ্য প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পর সকলের সাথে সকলের যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। সেই কারণে প্রত্যন্ত গ্রামেও আগ্রহীদের জন্য পৌঁছে যেতে পারেন তিনি।
জানা যায় প্রাচীন মধ্যযুগের ইতিহাসে কথ্থক শিল্পীদের উল্লেখ আছে। প্রাচীনকালে যারা নৃত্যের মাধ্যমে দেবদেবীর লীলা কৃত্তন বিশেষত শ্রীকৃষ্ণের লীলা মহন্ত প্রকাশ করতেন তারাই নটবরী নৃত্য নামে পরিচিত। মুঘল যুগে মন্দির থেকে রাজদরবারে স্থান পেলেও তা মূলত মনোরঞ্জনের বিষয়ক হয়ে নষ্ট হয় শিল্পত্ব। মন্দিরের দেবদাসী পরিণত হয় রাজদরবারের বাইজি রূপে। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে স্বামী হরিদাসজীর অভ্যুত্থান হয় তিনিই দিল্লীতে কথক নৃত্যের প্রচলন করেন। ওরঙ্গজেব এর রাজত্বকালে নৃত্যের প্রতি অবহেলার জন্য স্বামীজীর শিষ্য ঈশ্বরী প্রসাদ দিল্লি থেকে লখনৌতে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন।
ইতিমধ্যেই ভারতীয় সৃষ্ট এই নাচের মধ্যে বৈদেশিক অর্থাৎ ইসলামিক প্রভাব পড়ে। গেরুয়া বসন পরিবর্তিত হয় রাজ বেশে, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি মুকুটেরও বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আগমন হয় আমদ, প্রস্তুত হলো অদা, প্রণামী পরিণত হয় সেলামিতে এই রকম নানা ভাষাতেও ইসলামিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যার উল্লেখ আছে আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে। তবে লখনৌ, জয়পুর এবং বেনারস এই তিন ঘরানা আজও লক্ষ্য করা যায়। তাল ও লয়ের এত অদ্ভুত মেলবন্ধন অন্য কোন নৃত্যে পরিলক্ষিত হয় না। তবলা পাখোয়াজের বোলে, ঘুঙরুর ঝঞ্ঝার এই নাচের প্রধান বৈশিষ্ট্য।