অবতক খবর,২০ জানুয়ারি: কাঁচরাপাড়া আজ একটি অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল। এই অঞ্চলের এক বরিষ্ঠ বামপন্থী কর্মীর ১২৫তম জন্ম দিবসকে সামনে রেখে, তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে,’সেই মানুষটি’র নামে একটি পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণের উন্মোচন ঘটল। এই পুস্তকটি উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি শ্যামল ব্যানার্জী এবং অঞ্চলের প্রখ্যাত সেতার বাদক রবি চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায় যতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্যের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন উপস্থিতজনেরা প্রত্যেকেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অঞ্চলের সুধীবৃন্দ তো বটেই,বেশ কিছু লেখক,শিল্পী, সাহিত্যিকও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন অঞ্চলের তৃণমূল টাউন কংগ্রেসের সভাপতি খোকন তালুকদার।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যতীন ভট্টাচার্য্যের পুত্র মণি ভট্টাচার্য্য। তিনি তাঁর পিতার বিশেষ করে পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন নিয়েই আলোচনা করেন। কারণ রাজনৈতিক জীবন যে তাঁর পরিব্যাপ্ত সেটি তিনি বলার দায়িত্ব দেন এখানে উপস্থিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি।

অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতা শ্যামল ব্যানার্জী যতীন ভট্টাচার্য্যের যে শ্রমজীবী মানুষের কর্মীসুলভ জীবনযাত্রা, শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে তাঁর যুদ্ধের কথা বলেন।
শিল্পী রবি চক্রবর্তী তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। যতীন ভট্টাচার্য্যকে তিনি কি অবস্থায় দেখেছেন,তাঁর সঙ্গে কিভাবে তাঁর সংযোগ সে কথা বলেন। যতীন ভট্টাচার্য্যের যে শিল্পীসুলভ মনোভাব ছিল, শিল্পীদের প্রতি যে তাঁর একটা দায়বদ্ধতা ছিল,সে প্রসঙ্গে তিনি সুপরিচিত অন্ধ গায়ক কানাই বৈরাগীর কথা বলেন। তাঁকে কিভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন সে কথা বলেন। রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী খোকন তালুকদার বলেন, ‘যদিও আমি আজ অন্য রাজনীতি করি। কিন্তু আমার বাবা আজীবন কমিউনিস্ট ছিলেন। আমি সেই পরিবারের আমি । তাঁর কর্মকাণ্ড আমি দেখেছি,তাঁর কাছে অনেক ঘটনা আমি শুনেছি। লাল ঝান্ডাবাহী যারা,যারা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি করেন, আমার তাঁদের প্রতি নিশ্চিত শ্রদ্ধা রয়েছে। তাঁরা যে যথার্থ কর্মী সেটা আমি আমার বাবার সময়ে দেখতে পেয়েছি। আমি অনেক কমিউনিস্ট নেতাকেও স্বচক্ষে দেখেছি। হয়তো কোন কারণে আমি বামপন্থী রাজনীতি থেকে সরে এসেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে বামপন্থীদেরও একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে। এটি আমি মনে করি। তাঁর পিতা অজিত তালুকদারের সঙ্গে যতীন্দ্রনাথের সখ্যের কথা তিনি তুলে ধরেন।’ তিনি বামপন্থী কর্মীদের কুর্নিশ জানান।

এদিন যতীন ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবৃত্তি করেন ঋদ্ধিমা দে। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কুশল মৈত্র।

এই অঞ্চলের যতীন ভট্টাচার্য্য,অজিত তালুকদারের এই দুই কমিউনিস্ট কর্মীর মধ্যে কোথায় সাদৃশ্য ছিল, কি তাঁদের কর্মধারা এবং কমিউনিস্টদের যে অন্তরীণ জীবনযাপন সে সম্পর্কে বিশেষ বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক তমাল সাহা।
যতীন ভট্টাচার্য্যের পৌত্র তাঁর পিতামহের উপর সুন্দর একটি চিত্রায়ণ করেন সহজ সরল ভাষার মাধ্যমে।
দক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী অসিত সরকার যতীন্দ্রনাথের বিশেষ করে ৭২-এর সন্ত্রাসকালে পার্টি দপ্তরে যখন ভাঙচুর চলছিল সে সময় পার্টি সদস্য হিসেবে
তা রক্ষায় তিনি যে ভূমিকা ও ঝুঁকি নিয়ে ছিলেন তা তুলে ধরেন।
ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সুধীর দত্ত মার্কসবাদে তাঁর অবিচল আস্থা ও তাঁর কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা করেন।
আজকের অনুষ্ঠান কোন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয়, অন্যদিকে বলা যায় ঐতিহাসিক সে সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ঈশ্বর গুপ্ত পরিষদের সম্পাদক রণজয় মালাকার। আজকের এই অপূর্ব অনুষ্ঠান যে গ্রন্থ প্রকাশের দৃষ্টান্তমূলক অনুষ্ঠান, এর যে ঐতিহাসিক তাৎপর্য তা তিনি তুলে ধরেন। একটি বামপন্থী পার্টি অফিসে একজন বামপন্থী মানুষের জীবন চরিত সম্পর্কিত একটি পুস্তক প্রকাশ হচ্ছে, সেখানে বসে রয়েছেন পুরোপুরি বিপরীত চিন্তার কর্মী, কাঁচরাপাড়া টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি খোকন তালুকদার। তিনিও বামপন্থীদের পক্ষে সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর বক্তব্য রাখছেন, ভারতবর্ষের যে দুঃসময়,সেই সময়ে এই যে মানসিকতা, পাশাপাশি থাকার অর্থাৎ এই যে সহাবস্থান এবং মানবতাবাদী বোধ সেই সম্পর্কে তিনি বিশদ বলেন।

ঋদ্ধিমা দে-র সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে। আজকের অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে সার্থক। একথা অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিতজনের মুখ থেকে শোনা যায়। অনুষ্ঠানটি সুন্দর সঞ্চালনা করেন দেবাশিস রায়। তিনি তাঁর বক্তব্য এবং বক্তাদের বক্তব্যের মধ্যে সুন্দর যোগসূত্র রচনা করেন।