অবতক খবর,১৯ ফেব্রুয়ারি: কাঁচরাপাড়া কবিগুরু রবীন্দ্র পথে হকার উচ্ছেদ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে গেল শাসক পক্ষের নেতা এবং ব্যবসায়ী নেতারা।
কাঁচরাপাড়া উদ্বাস্তু প্রবণ অঞ্চল এবং একটি পরিচিত ব্যবসা কেন্দ্র। এখানে যেমন একসময়ের কথিত এশিয়ার বৃহত্তম রেল কারখানা রয়েছে, অন্যদিকে এটি তিনটি জেলা বেষ্টিত অঞ্চল। একে ঘিরে রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং হুগলি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষেরা এখানে সওদা করতে আসেন নিশ্চিত। ফলত,এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মধ্যে কাঁচরাপাড়া একটি হকার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাঁচরাপাড়ায় হকারদের বারবার পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে স্বাধীনোত্তর কাল থেকে। হকার্স কর্নার গঠিত হয়েছে, আনন্দ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি গঠিত হয়েছে, সুবোধ রায় মিনি মার্কেট তৈরি হয়েছে,নেতাজী সুভাষ পথে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। শেষ পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে বিশাল রেলওয়ের জমিতে। যার মূল্য প্রায় একশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
দেশজুড়ে বেকার সমস্যা পশ্চিমবঙ্গ তার ব্যতিক্রম নয়। ফলত, নদীর স্রোতের মত, পাহাড়ের মত, হিমালয় পর্বতের মত, আকাশের মত বেকার সমস্যা থাকবেই। এই বেকার সমস্যা যতদিন থাকবে মানুষ মান সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাইলে তাকে সৎ উপায়ে উপার্জন করতেই হবে। তারা তো কামাইবাজ নেতাদের মতো নয়। চাকরি বাকরি,অন্য ব্যবসাপত্র না করলেও ধনসম্পত্তির মালিক হয়ে নেতারা কোন অলৌকিক শক্তিতে আরামে আয়েসে ঘরসংসার করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ঈশ্বর বলে কেউ আছেন বলে নিশ্চিত বিশ্বাস করা যায়!!
কিন্তু সাধারণ মানুষকে চাকরি-বাকরিই হোক আর ফুটপাতে হকারগিরিই হোক করতেই হবে। ফুটপাতে হকারি করলে প্রশাসনিক লাথি ঝাঁটা খেতেই হবে, নেতা দাদাকে হিস্যা দিতে হবে, ভোটবাজ শাসক দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিতেই হবে।পেট যে বড় দায়। মানুষকে নিচে নামাতে নামাতে কত নিচে নামায়! মান যায়, সম্মান যায়!
এই হকার সমস্যা দূর করার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা দরকার। রাষ্ট্র বলতে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়কেই বোঝায়। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কোন সুপরিকল্পনা নিতে পারেননি, পারছেন না, পারবেন কিনা তাও সন্দেহ দেখা দিয়েছে বা তাদের সদিচ্ছা আছে কিনা তারও প্রমাণ রাখছেন না। দেশ এখন ভোট রাজনীতি সর্বস্ব। ফলে হকারদের নিয়েও ভোটের খেলা চলছে।
রাজনৈতিক নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, মেহনতী,শ্রমজীবী মানুষ, চাকরি নেই এরা পেটে রুটি রুজি রোজগার করবে কি করে? তাদের হকারি করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এই বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য এই রাজনৈতিক নেতারা ধারাবাহিক আন্দোলনে নামছেন না কেন? অন্যদিকে এই রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসায়ীদনেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। এই ব্যবসায়ীরা পুঁজিপতি, কোটি কোটি টাকার মালিক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যায় ভাবে ব্যবসা করেন। তারা এই হকারের মর্ম বুঝবেন না। হকারদের পেটের জ্বালা বুঝবেন না। এমন অভিযোগ তারা তাদের বিরুদ্ধে করেছেন।
এক রাজনৈতিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, এই ব্যবসায়ী সমিতি যারা পরিচালনা করছেন তারা নিশ্চিতভাবে হকারদের রুটি-রুজির কথা ভাবেন না। কারণ তারা আসলে বিজেপি করেন। বিজেপি মেহনতী,শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে। তিনি তার এই মূল বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী সমিতিতে কে তৃণমূল, বিজেপি,কে সিপিএম এমন আবার হয় নাকি? মানুষের ব্যক্তিগত রাজনীতি থাকে। ব্যবসায়ী সমিতি চলে সার্বিকভাবে। সমস্ত সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে। সেখানে কার্যকরী সমিতি রয়েছে, সেখানে এইরকম সংকীর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন উঠছে কেন?
অন্যদিকে টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অশোক তালুকদার জানিয়েছেন যে তারা এই নিয়ে রাজনীতি করছেন না,এটা রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়, এটা প্রশাসনিক প্রশ্ন, পৌরসভার প্রশ্ন। পৌর প্রতিনিধি কোন তৃণমূল বা কোন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন পৌর প্রধান হয়ে যান তখন তিনি নাগরিক প্রতিনিধি, তখন কোন রাজনীতি থাকে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল দলের সুপ্রিমো হলেও তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি আর তৃণমূল নেত্রী নন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মানুষের মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ এই দুই নেতার কথার মধ্যে পার্থক্য দেখা দিচ্ছে।
এখন আসল প্রশ্ন, এই ব্যবসায়ী সমিতিতে প্রধান উপদেষ্টার রূপে রয়েছেন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। তিনি বর্তমানে বিজেপি নেতা এইৎঅঞ্চলের। পূর্বে তিনি তৃণমূল দলের নেতা ছিলেন। কোনো কোনো নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, এই ব্যবসায়ী সমিতিতে বিজেপি রাজনীতির মানুষ থাকবে কেন? এখন প্রশ্ন,যখন শুভ্রাংশু রায় ব্যবসায়ী সমিতিতে উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হননি। বীজপুরের বিধায়ক হিসেবেই তিনি উপদেষ্টা পদটি পেয়েছিলেন। ব্যবসায়ী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি একসময়ে এই বিধায়কেরই ডানহাত ছিলেন বলে অঞ্চলের সকলেই জানেন।একথা শুধু ব্যবসায়ী নেতারাই নন, বহু সাধারণ ব্যবসায়ীও বলছেন।
এই ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই ব্যবসায়ী সমিতিকে ওলট-পালট করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তারা জানিয়েছেন, যাই বলুক না কেন জনস্বার্থে তারা ব্যবসায়ী সমিতি চালাবেন। কোন অন্যায় আবদারের কাছে মাথানত করবেন না। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে কিনা সেটা প্রশাসনের দায়িত্ব। তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই মতই প্রশাসন কাজ করেছেন তাতে তাদের কোন হাত নেই। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য, পথচারীদের পথ চলা এটাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী সমিতি।
ফলত, কাঁচরাপাড়ার হকার উচ্ছেদ নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতি এবং শাসক শ্রেণীর নেতাদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আরো জানা গেছে, যে সমস্ত ফুটপাতবাসী রয়েছেন তারা সকলেই কাঁচরাপাড়ার নন, বাইরে থেকে আগত। সুতরাং কি হবে এটা স্হানীয় নেতা ও প্রশাসনের আলাপ আলোচনার উপর নির্ভর করছে।
আরো দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত হকাররা বসেন রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য তারা ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, তারা মা মাটি মানুষের দল করেন, মমতা ব্যানার্জীকে সাপোর্ট করেন। অর্থাৎ বর্তমানে যা পরিস্থিতি মানুষকে রাজনৈতিক দলদাস হতেই হবে তার পেটের রুটি রুজির জন্য, শাসকশ্রেণীর ছাতার তলায় আশ্রয় নিতেই হবে। কারণ খিদে যে বড় দায়। ভগবান কেন যে পেট দিয়েছে, হায়!