অবতক খবর,৯ জুন: রাখাল চলে গেছে। বয়স হয়েছিল তাঁর ভালোই। বিছানায় শয্যাশায়ী ছিল। সে ৮ জুন চলে গিয়েছে রাত দশটা নাগাদ। দাহকাজ সেরে তাঁর ছেলেরা আজ ফিরে এলো ভোরে। রাখাল, রাখাল চন্দ্র দাস। থাকতেন হালিশহর বারুইপাড়ায়।
রাখাল তো সময়ের ইতিহাস। রাখালের চায়ের দোকানে রেল শ্রমিকদের আড্ডা তো ছিলই, শিল্প সাহিত্য নাটকমনস্ক কত মানুষের ভিড় সেখানে। কত রকমের আলোচনা। রাখালের চায়ের দোকান ছিল, রাখাল চলে গেল। প্রজন্ম এখন সে দোকান চালায়।
৭০ দশক। তখন তো প্রতিদিন সময়ের তুফান নিয়ে চলেছে। কাঁধে তার বারুদের ব্যাগ। রাখালের দোকানে রাজনৈতিক আলোচনা, শ্রমিকদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক! সেসব বিস্তর আলোচনা। বাবুব্লক মোড় সংলগ্ন এই অঞ্চল একসময়ে ছিল থিয়েটারের আঁতুড়ঘর। নাটকের মহড়া চলছে তার ফাঁকে এসে চা খাওয়া, নাটক নিয়ে আলোচনা সেসব দিন অতীত। শ্রমিকরা রাখালের চায়ের দোকানকে চেনে না এমন হতেই পারে না। ৭০ দর্শকের নকশাল আন্দোলন, জরুরি অবস্থা,বিশেষ করে ঐতিহাসিক রেল ধর্মঘট,ফোরম্যান কলোনিতে কংগ্রেসী মস্তানদের আনাগোনা,পুলিশি টহল, মহিলাদের নাস্তানাবুদ পর্যন্ত চলেছে। সবই জানতো রাখাল। রাখালের কাছে গেলে সব সংবাদ পাওয়া যেত।
রাখাল খবরের কাগজও বিক্রি করতো। স্থানীয় সংবাদপত্র বিশেষ করে বীজপুর মুখোমুখি সে বিক্রি করত। রাখাল বলতো, দাদা! ওই যে বিজ্ঞাপন দাও কোথায় কোথায় মুখোমুখি পাওয়া যায় সেখানে একটু লিখে দিও প্রাপ্তিস্থান রাখালের চায়ের দোকান। মুখোমুখির প্রাপ্তিস্থান হিসেবে রাখালের চায়ের দোকান লেখা থাকত। সেই রাখাল চলে গেল।
রাখাল নেই, রাখালের চায়ের দোকান বন্ধ
রাখাল ছিল ঠিকানাওয়ালা। কোন অচেনা মানুষ এসে রাখালের দোকানে কোয়ার্টার নাম্বার খোঁজ করলেই তিনি তাঁর হদিশ দিয়ে দিতে পারতেন। ওই তো, অমুক বাবু তো! ওইখানে ওই কোয়াটারের পেছনে অমুক নম্বরটা দেখবেন তার পাশেই পেয়ে যাবেন।
সময়ের এর ইতিহাস ধরে রেখেছিল রাখাল। সেই কালের রাখাল আজ আর নেই। তাঁর প্রজন্ম এখনও সেই দোকানটি পরিচালনা করে। রাখালের লিকার চা!দুধ চা!রাখালের চা! বলে এখন হয়তো তাঁর দোকানের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাস।