অবতক খবর,২২ জুলাই,নববারাকপুর :বাংলার এই “পাওয়ার গার্ল” এর জন্য আজ গর্বিত গোটা জেলা। ১১তম বিশ্ব শক্তি উত্তোলন ও ইনক্লাইন ব্রেঞ্চ প্রেস চাম্পিয়ান শিপে অংশ নিয়ে ভারতের হয়ে দুটি সোনা জয় বনানী বিশ্বাসের।
জানা যায় ১৫-১৯ জুলাই ওসকিমেন কামেনগ্রোসে কাজাখাস্তানে হওয়া এই আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড স্ট্রেন্থথলিফটিং ইনক্লাইন বেঞ্চ প্রেস প্রতিযোগিতায় সিনিয়র বিভাগে (২৩-৩০ বছর) ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলার মেয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নিউ বারাকপুর পুরসভার ২০ নং ওয়ার্ডে পশ্চিম কোদালিয়ার বাসিন্দা বনানী বিশ্বাস।আয়োজক কাউন্সিল অফ স্পোর্টস ভেটারেন্স অফ দ্য ইস্ট কাজাখাস্তান রিজিয়ন এবং কাজাখাস্তান স্ট্রেন্থথলিফটিং।
সোনা জয় করে সোমবার সকালে এলাকায় ফিরতেই যেন উৎসবের চেহারা নিল বিশরপাড়া কোদালিয়া রেল স্টেশন। ট্রেন থেকে নামতেই বাংলার এই মেয়ে কে সংবর্ধিত করা হল এলাকার বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে পরিবারের তরফে। গলায় ফুলের মালা স্মারক সন্মান দিয়ে রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লেন সোনা জয়ী “পাওয়ার গার্ল” বনানী বিশ্বাস। বাংলা থেকে মোট ছয় জন প্রতিনিধিত্ব করেন এই আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে।
চিন নেপাল রাশিয়া তাজিখিস্তান মঙ্গলিয়া পাকিস্তান সহ একাধিক দেশের প্রতিযোগিরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। পাশাপাশি এই একই বিভাগে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বিধাননগরের অশোক ঘোষও সোনা জয় করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। তবে নিউ ব্যারাকপুর এর মেয়ে বনানী বিশ্বাসের এই সাফল্যে আজ যেন গর্বিত বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মা প্রতিমা বিশ্বাস সহ গোটা বিশ্বাস পরিবার। পূর্বে বাবার কর্মসূত্রে রেলের চাকরি হওয়ায় উড়িষ্যায় থাকতে হত। তবে অবসর নেওয়ার পর বর্তমানে এক বছর হল নিউ ব্যারাকপুরে মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন বিশ্বাস দম্পতি। ছোটবেলা থেকে আকার প্রতি ঝোঁক ছিল মেয়ের। তার হাতের অসাধারণ রং তুলি পেনসিল জলছবির আঁকা ছবি দেখে তাক লেগে যেত সকলের।
উড়িষ্যা সম্বলপুর সহ সর্বত্র বিশেষ পুরস্কারও মিলেছে এই আঁকার জন্য। পরবর্তীতে শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাঁতারে ভর্তি করা হয় বনানীকে। সেখানেও জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বনানী।তবে কোভিডের কারণে ছাড়তে হয় সাঁতার। তারপর থেকেই বিধাননগরের মুরারিপুকুরে শক্তি সংঘ জিমে ভর্তি হয়ে শুরু করেন শরীর চর্চা। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু না ভাবলেও, জিম ট্রেনার বিশ্বজিৎ সাহার বিশেষ প্রশিক্ষনে অল্প দিনের মধ্যেই নজর কাড়ে ছাত্রী বনানী।
এরপর বেঙ্গল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিযোগিতায় বনানীকে প্রতিযোগী হিসেবে সুযোগ করে দেন কোচ বিশ্বজিৎ সাহা। তারপর সেখানেই জয়যুক্ত হয়ে সাফল্যে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুত করিয়েছিলেন নিউ ব্যারাকপুরের মেয়ে বনানী বিশ্বাসকে। অবশেষে ছাত্রীর সোনা জয়ে রীতিমত গর্বিত কোচ বিশ্বজিৎ বাবুও।
সোনা জয়ী এই পাওয়ার গার্ল বনানী জানান, সবকিছুই যেন আজ স্বপ্নের মত লাগছে। কখনোই আশা করেননি এতকিছু হয়ে যাবে। সিনিয়রে বিভাগে বডি ওজন ৬৫ কেজি। ইনক্লাইন বেঞ্চ প্রেসে ১১০ কেজি এবং বিশ্ব শক্তি উত্তোলনে মোট ৩২৭.৫ কেজি ছিল। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে তার বার্তা, বাবা মাকে সম্মান করার পাশাপাশি কখনোই হেরে গেলে চলবে না। কঠিন লড়াই করে এগিয়ে যাওয়াই আসল জীবন।বাংলার নিউ ব্যারাকপুরের এই “পাওয়ার গার্ল” এর জন্য যেন আজ গর্বিত গোটা জেলা।