ডাক্তারবাবু কবিকে বললেন, আমার কাছে সব মৃত্যুর কারণই কার্ডিয়াক ফেইলিওর। ভারতবর্ষেরও মৃত্যু হবে কার্ডিয়াক ফেইলিওরে। কার্ডিয়াক ফেইলিওরটি কি ? শুনুন…
কার্ডিয়াক ফেইলিওর
তমাল সাহা
আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয় সচল।
আমি সব অনুভব করি—
আমি এখন সব
মৃত মানুষের মুখ দেখি।
আমার সামনে দিয়ে
হেঁটে যায় চলমান ডেডবডি।
যেহেতু আমি ডাক্তারবাবু নই
সেহেতু আমার ডেথ সার্টিফিকেট
দেবার ক্ষমতা নেই।
আমার প্রতিবেশী এক ডাক্তারবাবু,
তাকে দেখলেই
আমার মৃত মানুষ বলে মনে হয়
এবং আমি নিশ্চিত তিনি মৃত্যু বিশেষজ্ঞ।
প্রতিদিন তার দরজার সামনে
ডেথ সার্টিফিকেট নেবার জন্যে বিশেষ
লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকেন।
প্রথমে ডাক্তারবাবু বিশেষ
লোকদের দিকে তাকাতেন।
এখন আর তাকান না,
কারণ তাকিয়ে লাভ নেই।
তাকে ডেথ সার্টিফিকেট দিতেই হবে
নাহলে তিনি পাড়ায় থাকতে পারবেন না।
ডাক্তারবাবু বললেন,আমি
মৃতদেহের মধ্যে জাত ধর্ম বর্ণের কোনো বিভেদ সৃষ্টি করি না।
সব মৃত্যুকে আমি সাম্যে পৌঁছে দিই।
আমি বলি,আপনি অন্য পাড়ায় চলে যান।
ডাক্তারবাবু বলেন,পাড়া ছেড়ে পালালেন ঠিক আছে
কিন্তু সমাজ ছেড়ে পালাবেন কি করে ?
যাবেন কোন পাড়ায় ?
ধর্ষণ করে খুন, বোমায় খুন, আগুনে পুড়িয়ে, বালিশ চাপা দিয়ে খুন, আত্মহত্যায় মৃত্যু—
মৃত্যুরও দখলদারি নিয়ে নিয়েছে
রাজনৈতিক মস্তানরা।
—- ডাক্তারবাবু একটা ডেথ সার্টিফিকেট চাই।
—- এ তো অস্বাভাবিক মৃত্যু, পুলিশ কেস,
এ আমি দিতে পারবো না।
—- মৃত্যুকে স্বাভাবিক করতে পারে
শুধু ডাক্তার, এটা আমরা জানি।
তাই আপনার কাছে এসেছি।
এই কথা বলে একটি ছাল ছাড়ানো মুর্গি বিশেষ লোকটি রাখলেন ডাক্তারবাবুর টেবিলের উপর।
ডাক্তার বাবু দেখলেন কশাইয়ের হাতের কারিগরি খুব সূক্ষ্ম, নিখুঁত।
ডাক্তারবাবু মাথা উঁচু করে
বিশেষ লোকটির দিকে তাকালেন,
এলাকার এম এল এ-র ডান হাত।
দ্রুত লিখে ফেললেন সার্টিফিকেট—
মৃত্যুর কারণ, কার্ডিয়াক ফেইলিওর।
ডাক্তারবাবু আমায় বললেন,
আমার কাছে খুন, হত্যা, আত্মহত্যা
সব মৃত্যুরই একই কারণ
কার্ডিয়াক ফেইলিওর।
আমি ময়না তদন্ত না করেই জেনে গেছি
এই দেশেরও মৃত্যু হবে
কার্ডিয়াক ফেইলিওরে।
ডাক্তারবাবুর কথা শুনে
আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি।
আমার চোখদুটো গোল গোল হয়ে ওঠে।
একটা অজানা আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করে।
আমি বুকে হাত রাখি, দেখি—
আমার কার্ডিয়াক সচল তো ?