বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর, ১৬ই অক্টোবর :মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন বাংলার ছ’টি আসনে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষনা করে দিয়েছে। এই সিটে কে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে জল্পনা ও প্রয়াস দুটি এখন শেষ পর্যায় । তার পাশাপাশি দলগত ভাবেও সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই এর কাজ প্রায় শেষ। যেদিন থেকে এই আসন গুলি ফাঁকা হয়েছে সেদিন থেকেই যে যার মত বিধানসভার বিধায়ক পদপ্রার্থী হতে গুটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন ।

পশ্চিমবঙ্গে যে ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে হচ্ছে তাতে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়া ও নৈহাটি বিধানসভা । তাছাড়া মেদিনীপুর , বাঁকুড়ার তালডাংরা, আলিপুরদুয়ারের মাদারীহাট এবং রয়েছে কোচবিহার জেলার সিতাই বিধানসভা সিট। আগামী ১৩ই নভেম্বর এই ছ’টি বিধানসভায় উপনির্বাচন এবং ২৩শে নভেম্বর ভোট গণনা।

এদিকে নৈহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বর্তমানে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক যেদিন বিধানসভায় বিধায়ক পদ ছেড়েছেন, সেদিন থেকেই এই বিধানসভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেই দৌড় শুরু করে দিয়েছেন। এই বিধানসভার বিধায়ক পদে প্রথম দাবিদার হলেন নৈহাটি টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা নৈহাটি পৌরসভার সিআইসি সনৎ দে। সনৎ বাবু পার্থ ভৌমিকের উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে মনে করেন। পার্থ ভৌমিকের নির্বাচনের দায়িত্ব এতদিন তিনি সামাল দিয়ে এসেছেন। এছাড়াও নৈহাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সনৎ বাবুর দাপট সর্বজন বিদিত। যদিও সনৎ বাবুর পাশাপাশি এই সিটে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রার্থীর দাবিদার হচ্ছেন পার্থ ভৌমিকের বন্ধু তথা নৈহাটির কাউন্সিলর তথা সি আই সি পার্থ প্রতীম দাশগুপ্ত। নৈহাটির এলিট ক্লাব থেকে সাধারণ মানুষ এবং সর্বস্তরে পার্থবাবুর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেশি। তবে দলের হয়ে যে বাহিনী ভোট করিয়ে নেয় তাদের কাছে সনৎ বাবুর থেকে তিনি অনেকটাই পিছিয়ে। তাই পার্থ প্রতীম দাশগুপ্তও এই দৌড়ে নিজেকে কম মনে করছেন না। তিনি নৈহাটি বিধানসভার পাশাপাশি জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন পদের দায়িত্ব সামলেছেন। তাই তিনি এই পদে নিজেকে যোগ্য দাবিদার মনে করছেন।

অন্যদিকে এই দু’জনের পাশাপাশি আরেকজন এই বিধায়ক পদের দৌড়ে রয়েছেন। এই বিধায়ক পদের অন্যতম দাবিদার পার্থ ভৌমিকের স্নেহপাত্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। যেকোনো রাজনৈতিক মঞ্চ, ছোট হোক কিংবা বড়, পার্থবাবুর পিঠেই সেটে থাকেন এই ছাত্রনেতা। দুজনেই সুযোগ পেলে মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি তথা সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একে অপরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। এছাড়াও দ্বাদশীর দিনে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিজয়া করতে গিয়ে পার্থবাবু তাঁর সঙ্গে তাঁর স্নেহের পাত্র তৃণাঙ্কুরকে নিয়েই হাজির হন। জেলা থেকে রাজ্য সর্বস্তরে পার্থবাবুর উত্তরসূরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন তিনি। এছাড়াও তৃণাঙ্কুরের রাজনৈতিক উত্থান নৈহাটি থেকেই। ছাত্রনেতা থেকে রাজ্য স্তরের ছাত্রনেতা হওয়ার এই যাত্রা শুরু তাঁর নৈহাটি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ থেকেই। পাশাপাশি পার্থবাবুর তাঁর প্রতি সমর্থন সর্বজনবিদিত। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পার্থবাবু তৃণাঙ্কুরকে ব্যারাকপুরের একটি বিধানসভা থেকে পদপ্রার্থী করতে চেয়েছিলেন।

এইসব দিক বিচার করে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে এবার নৈহাটি বিধানসভার তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই,আর তা নিয়েই চর্চা চরমে।

তবে এখানেই শেষ নয়। এই বিধানসভা থেকে প্রার্থী হতে দেবাংশু ভট্টাচার্য কম চেষ্টা চালাচ্ছেন না। তিনি বড়মা’র কাছে পুজো দিতে এসে নৈহাটির প্রশংসা এবং নৈহাটির প্রেমের কথা জানিয়ে গেছেন। এতে অনেকেই মনে করছেন যে, তিনি এই বিধানসভায় প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। এছাড়াও উপর মহলে দেবাংশুর গ্রহণযোগ্যতা স্থানীয় নেতাদের থেকে একটু বেশিই। এর পাশাপাশি স্থানীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে দেবাংশু এই সিট থেকে প্রার্থী হওয়ার দিকে অনেকটাই এগিয়ে।

তবে এই বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থীদের তালিকা এখানেই শেষ নয়। পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত!

এই বিধানসভা থেকে আরো একজন প্রার্থী হতে চলেছেন। তাকে তুরুপের তাস বলে মনে করা হচ্ছে। এই খেলাতে তাঁর প্রবেশ ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি হিসেবেই দেখানো হচ্ছে। তিনি উপরের সমস্ত নেতাদের দাবিকে ধূলিসাৎ করে এন্ট্রি পাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাঁর সমর্থনে নৈহাটির বেশিরভাগ কাউন্সিলরই মত দিয়েছেন। তাঁর প্রতি আস্থা রেখেছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই পার্থ ভৌমিকের সাথে কালীঘাটে দিদির আশীর্বাদও নিতে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি হলেন এবার নৈহাটি বিধানসভার সম্ভাব্য তৃণমূলের পদপ্রার্থী। তাঁকে এখানে প্রার্থী করার আরো একটি কারণ রয়েছে। নৈহাটির উপ নির্বাচনে বিজেপি এবং সিপিআইএমের প্রার্থী যারা হচ্ছেন তারা দুজনেই মহিলা। তাই তৃণমূলও একজন মহিলাকে প্রার্থী করতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। এমন জায়গায় এই ওয়াইল্ড কার্ডের প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হতে পারে প্রার্থী হিসেবে। তবে কে ইনি? কেন তাঁর ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি? এইসব নিয়ে জানতে চাইলে নজর রাখুন অবতক খবরে….

ক্রমশ চলবে…..