সকালের খাদ্যকে বাংলায় বলে প্রাতঃরাশ ইংরেজিতে বলে ব্রেকফাস্ট
ক্যান্টিনের কবিতা
তমাল সাহা
সামনে পরীক্ষা, ছেলেটি পড়েই চলেছে।
ভারতবর্ষ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ,এটি মহত্তমও বটে।
মহত্তম শব্দটি পেলি কোথায়?
বাবা, ওটা আমি নিজেই বসালাম। আচ্ছা বাবা,সব বইয়ের শুরুতেই সংবিধানের প্রস্তাবনা কেন?
ওটা তো স্কুলে পড়ায় না,প্রশ্নও আসে না!
শোনো কতগুলি জিনিস আছে পড়ার জন্য নয়, শুধু দেখার জন্য,দেখাতেই সৌন্দর্য।
বাবা!ও বাবা? — শুধু বাবা বাবা! কী?
তুমি তো রেগে যাচ্ছো! — আচ্ছা বলো।
বাবা! আমাদের সাংসদরা খুব গরিব জানো? আর আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইতে সব আছে কিন্তু সাংসদ ভবনে যে ক্যান্টিন আছে সেসব কথা কিন্তু লেখা নেই।
গরিব তো গরিব! তার সঙ্গে ক্যান্টিনের সম্পর্ক কি?
বাবা,তুমি জানো না আমাদের সাংসদরা গরিবদের মর্যাদা দেয়, সম্মান দেয়।
গরিবরা খেতে পায় না বলে তারা খুব কম দামের খাবার খায়। গরিবদের মঙ্গলের জন্য গরিবদের ভোটে এম পি হয়। এমন গণতান্ত্রিক চেতনার দেশ একটি বই দুটি নেই।
— কম দামের খাবার খায় মানে? আমিতো কোনোদিন শুনিনি! সাংসদরা খুবই কষ্টে থাকে!
বাবা, ওরা ক্যান্টিনে এক টাকা দামে এক কাপ চা খায়, সাড়ে পাঁচ টাকায় একবাটি স্যুপ খায়, এক টাকা দামের রুটি, দেড় টাকা দামের একবাটি ডাল খায়, বিরিয়ানির দাম সাড়ে চোদ্দ টাকা ও চিকেন সাড়ে চব্বিশ টাকা, মিলিয়ে মাত্র চল্লিশ টাকা।
মাছ খায় মাত্র তেরো টাকা দামের।
বাবা, ওরা খুব কষ্টের মধ্যে পড়ে আছে।
ওদের মাইনে জানো সামান্য। ট্যাক্স না কেটে মাত্র আশি হাজার টাকা। এতো গরিবিয়ানা বোধ এদের?
— আমি তো আগে জানতাম না!
বাবা জানো,এই ক্যান্টিনে কোনো বাছবিচার নেই। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল সব সাংসদরাই এই ক্যান্টিনে খায়।
এখানে কোনো জাত-ধর্মের বালাই নেই। হিন্দু নেই মুসলমান নেই,সবাই সংহত। এই জন্যই বলেছিলাম শুধু বৃহত্তম নয়,মহত্তম। তুমি তো রেগে গেলে!
সেদিন জানোতো,৭২ তম স্বাধীনতা দিবসের কদিন আগেই সংসদ ভবনের কাছে তিনটি শিশু অনাহারে মারা গিয়েছে।
— এটা কি কোনো নতুন খবর! না-খেয়ে থাকবে আবার বেঁচেও থাকবে? এ কোনো সংবাদ হলো? গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ পারেও বটে, এই সংবাদ ভাইরাল করতে!
একদিন গরিব সাংসদদের ক্যান্টিনে খাওয়াবে বাবা?
— আমরা কি সাংসদের মতো অতো গরিব,
যে আমাদের ক্যান্টিনে ঢুকতে দেবে?
আমি বুঝতে পারিনি বাবা! এইজন্যই কি ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে?
— তাই হবে হয়তো!