ক্ষেত্রজ ইতিহাসঃ প্রাচীনত্বে ঘিরে আছে কাঁপা সেনপাড়া জয়ন্ত সেনগুপ্ত বাড়ির দক্ষিণ কালীপুজো
তমাল সাহা

সূর্যের হাসিমুখমাখা নীল আকাশ। হিরন্ময় রোদ। সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। মাটিতে দোল খায় সাদা কাশফুল। কিন্তু তারপরেই পরিবেশ অন্য রূপ পায়। হেমন্তের হিম ঝরে। পাতার মর্মর ধ্বনি শোনা যায়। বেলা বুঝি ধূসর হতে থাকে। অমাবস্যার আকাশে আঁধারে ডুবে যায় নক্ষত্রগুলি। তারা কি আর তখন নক্ষত্র থাকে? হেমন্তের ধূসরবেলায় তারা অনুজ্জ্বল তারা হয়ে যায়।

ভূত চতুর্দশী আসে। ভূত-পেত্নীরা নৃত্য করে, নাঁকি সুরে গান গায়। গায়ে কাজল কালো চাদর চড়িয়ে অমাবস্যা ঘিরে ফেলে ভূমণ্ডল চত্বর।ছমছম পরিবেশ। দূরে শিবা ডাকে শ্মশান চত্বরে। দশবিদ্যা মহাকালী চামুণ্ডা ছিন্নমস্তা শ্যামা ভুবনেশ্বরী দক্ষিণা কালী শ্মশান কালী কত রূপে চলে আসে প্রতিমা আমার!

সেই কোন যুগে ওপারের পদ্মাপারের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ।মায়ের তখন যান্ত্রিক মূর্তি। আগমবাগীর মাতৃপূজা প্রচলনের অনেক আগে থেকেই তাদের এই পুজো চলে আসছে,বললেন বর্তমান উত্তর পুরুষ জয়ন্ত সেনগুপ্ত। সুতরাং আমাদের পুজোর প্রারম্ভিক কালের গায়ে কতকালের আদিমতা লেগে আছে, আমি জানিনা ।সেটা আপনি বলুন ৪০০-৫০০-৬০০ বছর আগেও হতে পারে।

আসলে এটা তান্ত্রিক মতে গৃহপূজা। তান্ত্রিক মতে আগম ও নিগম দুই পদ্ধতিতে মায়ের তপস্যা করা হয়। এখানে মন্ত্রোচ্চারিত হয় আগম মতে।

জয়ন্ত বাবু জানান, আমরা এই বাংলায় এই পুজো করছি প্রায় স্বাধীনতা কাল থেকেই। কারণ তখনই আমরা দেশ বিভাগের সময়ে ওপার বাংলা ছেড়ে চলে আসি।

মন্দির সিংহাসন দেখুন। আমাদের পুজো টাটের উপর পটের পুজো। আমাদের মা দক্ষিণা কালী। দক্ষিণ পা-টি বাবা নীলকন্ঠের বুকের উপর রেখে মা দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের পাঁচ পোয়া ঠাকুর এটাই রীতি। অমাবস্যার দিন সূর্য ডোবার পরে প্রতিমা স্থাপন করতে হয়। অমাবস্যায় রাত্রি ঘন হলে সারারাত পুজোর পর সূর্য ওঠার আগেই আমাদের প্রতিমার বিসর্জন দিতে হয়। একটি সূর্যাস্ত থেকে আরেকটি সূর্যোদয়ের কালের মধ্যান্তরই আমাদের আরাধনার সময়। পঞ্চ ম-কার দ্বারাই আমাদের পুজো সম্পন্ন হয়। মৎস্য মুখে ধারণ করে মদ্যপান করে এই পূজা সম্পন্ন করাই আমাদের রীতি। আমাদের উল্লেখযোগ্য ভোগ-শিবা ভোগ। বোয়াল মাছের ভোগ।ডমরু বাজিয়ে শিঙায় পবিত্র আওয়াজ তুলে এই পূজা নির্বাহ করা হয়।

শুদ্ধ রক্তিম পটবস্ত্রধারী জয়ন্ত বাবু নিজেই শুদ্ধাচারে পূজায় নিমগ্ন থাকেন। তিনি বলেন, মায়ের ছোট মা, বড় মা, মেজো মা, ন মা—এসব আবার হয় নাকি? মা-তো মহামায়া।ছোটর মধ্যে যেই প্রাণ বড়োর মধ্যেও সেই প্রাণ। আমাদের এই মা বিপত্তারিণী। আমাদের পরিবার নিকট-আত্মীয় জনকে বরাভয় প্রদান করেছেন, এটা আমাদের জীবনে পরীক্ষিত সত্য‌। অনেকে বলেন, জাগ্রত। আমরা বলি,অন্তর-আত্মার মা তিনি। আমাদের অন্তরে জেগে থাকেন, জেগে আছেন, জেগে থাকবেন।