অবতক খবর,২৪ ফেব্রুয়ারি,নদীয়া:- আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতনই জন্ম নিয়েছিল ভাস্কর। স্বাভাবিক বৃদ্ধি যে খানিকটা ব্যহত হয়েছিলো তা বোঝা গেছিল কিছুটা বড় হওয়ার পর বয়সন্ধিকালে। বিশেষ করে হাত দুটো অস্বাভাবিক ছোটো। কিন্তু খর্বাকার সেই মানুষটির ছোটো সেই হাতেই এলো পুরষ্কার। ডাক্তারি ভাষায় লিউকেমিয়া বা শরীরের অপরিপক্ক শ্বেত কণিকা বৃদ্ধির কারণে, পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের অভাবে হাইপোথাইরয়েজিয়ম, অথবা ক্রোমোসোমাল ডিজঅর্ডার যে কারণেই হোক না কেন চলতি কথায় বামন। হঠাৎ হাড় এবং মাংসপেশির অনিয়মিত বৃদ্ধি, যার গ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন।
নদীয়ার গাংনাপুর এলাকার বাসিন্দা 25 বছর বয়সী ভাস্কর বিশ্বাস এইরকমই 50% প্রতিবন্ধকতা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ হলো না বাবার হঠাৎ মৃত্যুর কারণে, এরপর একমাত্র পরিবার সদস্য মায়ের এবং নিজের খরচ যোগাতে বাবার মতই কলকাতায় ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির কাজ বেছে নেন। দুর্বল হাত দুটোকে শক্তিশালী করে তোলার অদম্য আগ্রহ ছিলো তার। বিভিন্ন জিম, শারীরিক অনুশীলন কেন্দ্রে গিয়েও বামনত্বের কারণে ফিরতে হয়েছে কটাক্ষ আর বিদ্রূপ নিয়ে। তবে সঠিক খোঁজে মনে আশা নিয়ে বিভিন্ন শারীরিক অনুশীলন প্রতিযোগিতাতে হাজির হতো ভাস্কর। এ রকমই একটি অনুষ্ঠানে 2019 সালের মিস্টার এশিয়া শিরোপা পাওয়া শুভেন্দু কর্মকারের সাথে আলাপ হয় তার।
গাংনাপুর থেকে কর্মক্ষেত্র কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারী করে, রাত্রি আটটায় ফেরার পর শরীরচর্চা করতে তিনি বলতেন না অনুশীলন কেন্দ্রেগিয়ে। লকডাউন এ কাজের চাপ খানিকটা কম থাকার কারণে দু’বছরেই অনেকটাই রপ্ত করে সে। চাকদায় আয়োজিত বেঙ্গলে সেকেন্ড এবং জেলায় থার্ড হয়। এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র সেই, পুদুচেরিতে মিস্টার ইন্ডিয়া জুনিয়র শিরোপার জন্য অংশগ্রহণের আবেদন পায়। যদিও সেখানে প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে থাকলেও, বিনা পুরস্কারেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
তবে তার অনুশীলন গুরু শুভেন্দু বাবুর মতে বিশেষভাবে সক্ষম হলেও, এত অল্প দিনের মধ্যে জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতার সুযোগ অনেকেই পায় না, আগামীতে সফলতা পাবেন নিশ্চয়ই। সমস্ত দিক থেকে সহযোগিতা করে আরো এক ধাপ এগিয়ে দেবো ওকে। আই বি বি এফ অনুমোদিত হওয়ার কারণে এই সংস্থা থেকে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।
তবে, সেই হাত দুটোর উপর অগাধ বিশ্বাস ভাস্করের, জাতীয় পুরস্কার নেবেন ওই হাতেই।