অবতক খবর,২৩ জানুয়ারি: সুজয় কর্মকার,বয়স ২০। গ্রাম কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে এই নামটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই বয়সে সে একটি মহৎ কার্য সম্পন্ন করেছে। গ্রাম কাঁচরাপাড়ার শহীদ পল্লীর বাসিন্দা ছিল সে। কাঁচরাপাড়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খুবই প্রাণচঞ্চল এবং এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল এই ছেলেটি।
বাইকে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় এক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে আরোহী তার বন্ধু সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় সুজয়কে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। ডাক্তাররা ঘোষণা করেন সুজয়কে আর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যেই তার ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে। মেডিকেল টিম বসে। আলোচনার পর তার পরিবারকে জানানো হয় যে সুজয়ের প্রাণ আর ফিরে আসবে না। তার ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে। তবে একটি মহৎ কার্য হতে পারে সুজয়ের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি দান করা হয়। অনতিবিলম্বে চারজন মানুষ সজীব তো হবেনই চলাফেরাও করতে পারবেন সুজয়ের প্রদত্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা। দীর্ঘ আলোচনার পর তার পরিবার থেকে সম্মতি দেওয়া হয়।
২০ জানুয়ারি সুজয়ের দেহ থেকে অঙ্গ নিয়ে চারজন তাদের জীবনের সজীবতা ফিরে পান। ইতিমধ্যেই তারা হাঁটাচলা করছেন। অর্থাৎ এই অঞ্চলে দেহদান, অঙ্গদান যে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় তার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল সুজয় কর্মকারের পরিবার। তার পরিবার অত্যন্ত গর্বিত এই কাজটি করতে পারার জন্য।
তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সুজয়ের পিতা নেই তার মা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তার দাদা পড়াশোনা ছেড়ে খুবই সামান্য আয়ে সংসার চালান। ভাইকে বড় করবেন এমনই আশা ছিল তার। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং আমরা যখন তার বাড়িতে যাই পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় করে তাদের এই প্রিয় সুজয়ের কথা, এই পরিবারটির কথা জানান।
তার মা এবং দাদা দুজনেই বলেন,সুজয় বেঁচে আছে। তার মা বলেন, আমি একটি পুত্রের বদলে চারটি পুত্র পেয়েছি। তার দাদাও বলেন, আমরা সুজয়কে নিশ্চয়ই দেখতে পাবো ওই চারজনের মধ্যে যারা আমার ভাইয়ের অঙ্গ সংস্থাপনের দ্বারা এখন সজীব। তাদের কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা বা বড় কোন ইচ্ছা নেই। তার মায়ের ইচ্ছা, যে চারটি পরিবার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে তারা যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তবেই তিনি সান্ত্বনা পাবেন যে সুজয় রয়েছে আরও চারটি সন্তানের মধ্যে।
এই অল্প বয়সে সুজয়ের এই অঙ্গদান একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক ঘটনা হয়ে রইল।