অবতক খবর , হুগলীঃ আর পাঁচটা ছেলের মতো তারও চোখ আছে। কিন্তু চিকিৎসার গাফিলতিতে দুচোখে নেমে আসে অন্ধকার। একটা সামান্য ভুলেই শৈশবে হারায় দৃষ্টি। তবে প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যায়নি বছর তেইশের জুধাজিৎ দে। বাল্যকাল থেকেই শুরু জীবনের সঙ্গে লড়াই। স্বপ্ন একটাই নিজেকে ব্যতিক্রমী গড়ে তুলতেই হবে। হার মানাতে হবে প্রতিবন্ধকতাকে। সেই লড়াইয়ে তার প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠে দাবার ঘুঁটি। যাতে ভর করেই সে পৌঁছে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক স্তরে। কিন্তু ভাগ্য তার সঙ্গ দেয়নি। তাই এখনও থমকে আন্তর্জাতিক স্তরের লড়াই। ২৩ বছরের জীবনে হাজার চড়াই-উতড়াইয়ের মাঝেও আজ অনেকটাই সফল হুগলির উত্তরপাড়ার জুধাজিৎ দে।
চন্দননগরের চেস্ লাভার এবং সবুজ সংঘের পরিচালনায় আয়োজিত হয় ALL BENGAL OPEN RAPID CHESS TOURNAMENT 2020. সেখানেই নজর কাড়েন জুধাজিৎ । জুধাজিৎ বলেন , ‘ আমি ছোট বেলা থেকেই দাবা খেলতে ভালোবাসি । যেখানে সমান গতিতে আমি প্রতিদ্বন্দ্বী করতে পারি। আমি চাই আমার সব দুর্বলতাকে কাটিয়ে একজন ভালো দাবাড়ু হয়ে উঠতে।’ সে আরও বলেন , ‘ আমি যেহেতু দৃষ্টিহীন তাই আমাকে দাবা খেলায় এসকর্ট হিসাবে সাহায্য করে। আমার প্রতিটি খেলাতেই মা – ই আমাকে সঙ্গ দেয়। আমি চাই সকলের আশির্বাদ নিয়ে দাবাতে আমি অনন্য রেকর্ড গড়তে।’
চোখের আলো কেড়ে নিলেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেনি ছেলে। সেটা ৩ বছর বয়স থেকেই লক্ষ্য করেছিলেন জুধাজিতের মা রুমা দে। তাই ছেলের আগ্রহে ভাঁটা ফেলেননি তিনি। বরং ঢেউয়ের মত স্বপ্নের জগতে ভাসতে সাহায্য করেছেন তিনি । এখন একটাই আর্তি রুমাদেবীর। ছেলের প্রতিভাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে প্রয়োজন সাহায্যের। সেটা মিললেই জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ে ‘জিত’ হবে জুধাজিতের।
এবিষয় জুধাজিতের মা রুমা দে বলেন , ‘ জন্মের সময় চিকিৎসকদের একটি সামান্য ভুলেই আমার ছেলের চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায়। তখন ভেবেছিলাম যে আমার ছেলে হয়তো এসমাজে নিজেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে অক্ষম। কিন্তু , জুধাজিতের ছোট থেকেই দাবাতে আগ্রহ ছিলো। সেই ওকে আমরা ছোট বেলা থেকেই দাবা প্রশিক্ষণ শিবিরে ভর্তি করি। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে সে দাবাকেই তার জীবনের একটি অঙ্গ হিসাবে নেয়। জুধাজিত বেশ কয়েকটি দাবা টুর্নামেন্টে জয় ও পেয়েছে। সকলের আশীর্বাদে জুধাজিত রাজ্য স্তরে দাবায় অংশগ্রহণ করেছে।’
জুধাজীতের প্রসঙ্গে এদিনের টুর্নামেন্টের একজন উদ্যোক্তা শুভম সুর জানান , ‘ জুধাজিতের এই অদম্য লড়াই আজকের যুব সমাজের প্রত্যেকটা দাবাড়ু কেই এগিয়ে চলতে সাহায্য করবে।’ তিনি আজকের টুর্নামেন্ট সম্পর্কে বলেন যে , ‘ আমরা আগের বছর থেকে এই রাজ্য স্তরে দাবা টুর্নামেন্ট পরিচালনা করছি চন্দননগরে। এবারে এটা দ্বিতীয় তম বর্ষ। অনেক জায়গায় দাবা টুর্নামেন্টে অনেকরকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে একাধিক খেলোয়াড়দের। আমরা এই টুর্নামেন্টের মধ্যে দিয়ে তাদের সেই সব ত্রুটি গুলোকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবারে মোট ২৫০ জন মত দাবাড়ু এতে অংশগ্রহণ করেছে। আগামীদিনে আমরা দাবা খেলাটাকে সকলের কাছে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে চাই।’