অন্যদুর্গা —–দুই

দুর্গার রূপে কী মোহময়তা আছে কে জানে? বিপ্লবীরাও পড়ে যায় তাঁর প্রেমে! আসলে বাংলাভাষার প্রথম স্বরবর্ণটির দিকে তাদের প্রবল ঝোঁক। অ-য়ে অস্ত্র, অ- য়ে অসুর। অস্ত্রবাদী দুর্গা তাই তাদের উপাস্য হয়ে ওঠে।

ছিল দুর্গাপূজা হয়ে গেলো অস্ত্রপূজা
তমাল সাহা

বিপ্লবীদের যে কত রকম কান্ড! শুধু দেশের দিকে তাদের অভিমুখ, তাদের চিন্তায় গ্রন্থিত থাকে যে কী সুখ, কী উত্তজনা, যারা নিবেদিত প্রাণ তারাই তা জানে। আমরা হয়রান খুঁজে খুঁজে তার মানে।

অনুশীলন সমিতি। আমাদের গর্বের বিপ্লবী সংস্থা। আন্ডারগ্রাউন্ড দল। আমাদের গর্ব কেন? কারণ সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুশীলন তত্ত্বের আদর্শে গঠিত ছিল এই সশস্ত্র সংগঠন। বন্দে মাতরম!

বঙ্কিমচন্দ্র তো আমাদের প্রতিবেশী। নৈহাটি কাঁঠালপাড়ার মানুষ। হালিশহর চৌধুরীপাড়ার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির মেয়ে রাজলক্ষ্মী দেবী তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তিনিও বিপ্লবীদের মদত দিতেন। তাছাড়া এই দলের মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র। তিনিও নৈহাটির মানুষ।

আর কারা ছিলেন এই দলে? অরবিন্দ ঘোষ, শশিভূষণ রায় চৌধুরী, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ডাকসাইটে বিপ্লবীরা। সে এক ডানপিটে দল।

১৯০৬ খ্রীস্টাব্দ। কর্নওয়ালিস স্ট্রিট। দোতলা বাড়ি। পুজো হচ্ছে, পুজো। ঘটা করে পুজো। প্রতিমা নেই অথচ পুজো হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে কী করে চোখে দিতে হয় ধুলো তা আমাদের বিপ্লবীরা জানে।

দুর্গা নয়, সাজানো হলো অস্ত্র। বর্শা, বল্লম, ঢাল, তলোয়ার, ছোরা, খাড়া, ভোজালি কাটারি– এরাই হলো প্রকৃত প্রতিমা।
শক্তি রূপেন সংস্থিতা—
পুরোহিত এলো মহারাষ্ট্র থেকে। উচ্চারিত হলো বৈদিক মন্ত্র।

এসব যদি এখনকার কমিউনিস্ট উগ্রবাদী বিপ্লবীরা শোনে, কী হবে তাদের মনে!
এ পুজোর উদ্যোগ কারা নিয়েছিলেন? সেইসব বাঘা বাঘা বিপ্লবী— যদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, পুলিনবিহারী মুখোপাধ্যায়, তারকনাথ দাস।

সেই তারকনাথ দাস! কাঁচরাপাড়ার জনজীবনের সঙ্গে যিনি যুক্ত। কাঁচরাপাড়া মাঝিপাড়া অঞ্চলের মানুষ। এমন বিদগ্ধ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিরল। তিনিও জড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র দলে।

কারা দেখতে এসেছিলেন সেই পুজো?
বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, বাঘা যতীন, যতীন্দ্র মোহন ঠাকুর।

দুর্গার নামে অস্ত্রের আরাধনা কি প্রতিবিপ্লবী তৈরি করে? সেদিনের দেশমাতৃকার ধ্যানে মগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবীরা কি আজকের So-called মার্কসবাদওলা, হাওলা- গাওলাওলা, পয়সা পেটাইওলা মাতব্বরদের চেয়েও খারাপ ছিল?

বিপ্লবীরা শক্তির আরাধনা করবে না তো কে করবে? দশপ্রহরণের জন্য তারা কার আরাধনা করবে?

অস্ত্র চাই। অস্ত্র না হলে অসুর বধ কিভাবে হবে?
আজ তো অন্য ধরনের অসুর। এ তো রাজনৈতিক অসুর। মানুষের রক্তশোষক অসুর। অস্ত্র চাই। অস্ত্র তো চাইতেই হবে।