অবতক খবর,চাঁচল, ২৪ নভেম্বর : জন্মের পর থেকে সেরিব্রাল পালসির রোগী চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের অলিহণ্ডা অঞ্চলের শীতলপুরের বাসিন্দা মৃণাল আলি। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারে না। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। স্থানীয় হাইমাদ্রাসার ছাত্র মৃণাল। বাবা দবিরুদ্দিনও অসুস্থ। সেভাবে কাজকর্ম করতে পারেন না। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় একাধিকবার এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে মৃণাল। বারবার ছুটে গিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতেও। কিন্তু এখনও কোনও সরকারি সহায়তা জোটেনি তার। শেষ পর্যন্ত সে দ্বারস্থ হয়েছে ব্লক প্রশাসনের। সঙ্গে সঙ্গে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিডিও। আগামীতে তার চিকিৎসা এবং পড়াশোনায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তাও দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মৃণালরা দুই ভাই। সে বড়। বাবা দবিরুদ্দিন একসময় ইলেকট্রিকের কাজ করে সংসার টানতেন। মা নুরবানু বিবি কৃষি শ্রমিক। মৃণাল জানাচ্ছে, তার হাত-পা ঠিকমতো কাজ করে না। ঠিকমতো হাঁটতে পারে না, খেতেও পারে না। ভাতের থালা হাত থেকে পড়ে যায়। সরকারি সাহায্যের জন্য অনেকবার পঞ্চায়েতে গিয়েছে। কাজ হয়নি। তাই সে বিডিওর কাছে এসেছে। বিডিও তার ভাতার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
মৃণালের প্রতিবেশী আরসিফা বিবি জানাচ্ছেন, জন্ম থেকেই মৃণাল অসুস্থ। তার হাত-পায়ে কোনও জোর নেই। নিজে ভাতটুকুও খেতে পারে না। ওর জীবনটা কীভাবে চলবে? সরকারি কোনও সাহায্য পাওয়া গেলে ওর সুবিধে হয়। ওর বাবা ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। উপর থেকে পড়ে দিয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। কোনওরকমে সংসার চলছে। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা প্রধানরা নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত। মৃণালকে সাহায্য করার সময় তাঁদের নেই। বলছেন, সরকার না দিলে তাঁরা কি নিজেদের পকেট থেকে সাহায্য করবেন? পরিবারটি সরকারি সাহায্য পেলে খুব ভালো হয়।
আরেক প্রতিবেশী মেহবুব আলম জানান, পরিবারটির আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। কোনওরকমে সংসার চলে। ছোট থেকেই দেখছি, মৃণাল অসুস্থ। কোনও কাজকর্ম করতে পারে না। এমনকি নিজের কাজও করতে পারে না। তার বাবার দুটি বিয়ে। আগে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করত। এখন কাজ করতে পারে না। এমন একটি পরিবারকে অবশ্যই সরকারি সাহায্য করা উচিত।
দবিরুদ্দিন সাহেবের বক্তব্য, ছেলেটা ছোট থেকেই অসুস্থ। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারে না। তবু স্থানীয় একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় পড়তে যায়। টাকার জন্য ছেলেটার ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারিনি। পড়াশোনাও চালাতে পারছি না। সরকারি কিছু সাহায্য পেলে খুব ভালো হয়। পঞ্চায়েত সদস্য ও প্রধানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কোনও কাজ হয়নি। আমি নিজেও অসুস্থ। মানুষের ধান কেটে কোনওভাবে সংসার চালাই।
চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য জানান, শীতলপুর থেকে মৃণাল আজ আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সে সেরিব্রাল পালসির রোগী। কিছু সমস্যা নিয়ে সে আমার কাছে এসেছিল। আমরা তাকে আজ কিছু সাহায্য করেছি। ও যাতে দ্রুত সরকারি ভাতা পায়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে যাতে পড়াশোনা করতে পারে, তার জন্য সবরকম সরকারি সহায়তা করা হবে। তার চিকিৎসার জন্য আমি চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছি।