২৫ মার্চ ১৯৭১ কালো দিন– গণহত্যা দিবস। অপারেশন সার্চলাইট নেমে এলো পূর্ব পাকিস্তানে। ব্যাপক বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, শুরু হয়েছিল গণহত্যা। রক্ত স্রোতের মধ্য দিয়েই জেগে উঠেছিল নতুন বাংলাদেশ
জাগরণ
তমাল সাহা
সোনার বাংলা, রূপসী বাংলার মুখ
তুমি দেখিয়াছ
বলিয়াছ, সে আমার বাংলা রে!
পদ্মা বুড়িগঙ্গা কপোতাক্ষ শীতলক্ষ্যার জলস্রোত
রক্তের নদী হইয়া গিয়াছে, তুমি দেখো নাই।
শিলাইদহে বজরায় তুমি ভ্রমণ করিয়াছ
তীব্র সেই জলযান,
দেখিয়াছ কি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে
দুর্জয় রাইফেল মেশিনগান!
বট হিজল আমলকীর ছায়া
পরিত্যাগ করিয়াছে তারা
ধরিয়াছে গেরিলা যুদ্ধের পথ,
দীর্ঘ নয় মাস ধরিয়া লিখিয়াছে তারা
অনন্য এক রক্তের ইতিহাস।
জয় বাংলা! উচ্চারণ
কাঁটাতারের বাধা মানে নাই
উত্তাল করিয়াছে এপারের আকাশ বাতাস…
তোমরা দেখো নাই নরমেধযজ্ঞ—
অপারেশন সার্চলাইট।
ঘনতম রাত্রির অন্ধকারে তীব্র আলো জ্বলে
কারা কাকে খোঁজে
সামরিক বুটের আওয়াজে।
হাজার হাজার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ছাত্র-ছাত্রীর নিধনযজ্ঞ
বিশ্ববিদ্যালয় হইয়া গিয়াছে গোরস্থান,
অগণন লাশের গণকবরের উপর দিয়া বুলডোজার চলিয়া যায়,
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এ কোন শ্মশান!
লক্ষ লক্ষ ধর্ষিতার যন্ত্রণাকাতর মুখ,
যোনিমুখে রক্তের প্রস্রবণ বহিয়া যায়
মন্দির নানকশাহী চুরমার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সেতুখানি ভাঙিয়া পড়ে হানাদারি কবলে।
চতুর্দিকে আগুন আর আগুন জ্বলে।
তুমি দেখো নাই মারণাস্ত্র
কামান মর্টারের উন্মত্ত উল্লাস!
বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীনিবাস—
রাস্তায় ছড়ানো-ছিটানো তাহাদের লাশ।
কত লক্ষ মরে, কত লক্ষ ভিটেমাটি ছাড়ে
কত লক্ষ হারানো নিরুদ্দেশ
অসহায় বিপন্নতা গ্রাস করে!
এ কোন পৈশাচিক বর্বরতা!
বাতাস বলিয়া যায়…
ভাগ্যহত মানুষ আর মানুষ
সূর্যের দিকে চেয়ে থাকে হতাশায়
মুক্তির আশায়।
চলমান জীবন ভেঙে চুরমার করে দিতে চায় হানাদারি হিংসা দ্বেষ।
শহিদদের লাশ দুহাতে সরিয়ে
ধর্ষিতার জন্মস্থানের রক্ত মেখে
গণকবরের মাটি মুঠো করে ছুটে আসে–
নবজাত বাংলাদেশ।