অবতক খবর,২৪ মার্চঃ নদীর তীরে বড় এক ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়েছে। তাতে ফরমান দেওয়া হয়েছে গঙ্গা নদী থেকে মাছ ধরলে দিতে হবে কর। তাতে উল্লেখ রয়েছে করের পরিমাণ।জাল হিসাবে মাছের দাম প্রতি ২০ শতাংশ হারে কর দিলেই গঙ্গা নদী থেকে মাছ ধরা যাবে।
কলকাতা হাইকোর্ট ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে গঙ্গানদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী মৎস্যজীবিদের কাছে তোলাবাজি। আর তোলা দিতে অস্বীকার করলেই তোলাবাজদের মস্তানরা চোখ রাঙানির পাশাপাশি কেটে নেওয়া হবে মাছ ধরার জাল। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে তার বাজার মূল্যের ২০ শতাংশ তোলা দিতে হবে তোলাবাজদের।একেবারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নামাঙ্কিত বোর্ড টাঙ্গিয়ে তোলা আদায় হচ্ছে মৎস্যজীবিদের কাছ থেকে। মোথাবাড়ি ধীবর সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে তোলাবাজির এমনই অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন গঙ্গায় মাছ ধরার ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের কোন কর দিতে হবে না। একই নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টও। কিন্তু সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গত আট বছর ধরে চলছে তোলাবাজি।
মানিকচকের নারায়ণপুরের মৎস্যজীবী বুলবুল চৌধুরী জানান, আজ আমরা গঙ্গা নদীতে প্রায় সাত হাজার টাকার মাছ ধরেছিলাম। মাছ নিয়ে ঘাটে আসতেই তোলাবাজদের মাস্তানরা আমাদের কাছ থেকে টাকা চাই। টাকা দিতে অস্বীকার করলেই আমাদের সমস্ত মাছ ও জাল আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় এবং ১৪০০ টাকা দাবি করে।শেষমেষ ১২০০ টাকা তোলা দিয়ে মস্তানদের কাছ থেকে মাছ ও জাল ছাড়ায়। তাই আমরা সমস্ত মৎস্যজীবী সিদ্ধান্ত করেছি, তোলাবাজদের বিরুদ্ধে মানিকচক থানায় ও জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ করেছি।
অপর এক মৎস্যজীবি সতীশ চৌধুরী জানান তোলাবাজদের মস্থানদের ভয়ে গঙ্গা নদীতে মাছ ধরতে পারছি না। ফলে বিপন্ন তাদের জীবিকা। মোথাবাড়ি ধীবর সমবায় সমিতির লিমিটেডের কর্ণধার পঞ্চানন মাহাতোর দাবি, সরকারি নিলামে আমি ১১ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৯৯ টাকায় লিজ নিয়েছি। আমার কাছে জলকর আদায়ের বৈধ কাগজ আছে। সেই অনুযায়ী আমরা মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে জলকর নিচ্ছি। তবে কুড়ি শতাংশ তোলা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন পঞ্চানন মাহাতো। তার দাবি ৫ শতাংশ হারে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে জলকর নেওয়া হচ্ছে। যদি আমাদের জলকর বাতিল হয় তবে বাতিলের শংসাপত্র দিক প্রশাসন এবং লিজের সমস্ত টাকা ফেরত দিক সরকার।আর এমনটা হলে আমরা জলকর নেওয়া বন্ধ করব ।
আর এই বিষয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, বিজেপি নেতা গৌড় চন্দ্র মন্ডল। গৌড় চন্দ্র মন্ডলের দাবী, সরকার নির্দেশ দিয়েছে গঙ্গা নদী থেকে মাছ ধরলে মৎস্যজীবীদের কোন কর দিতে হবে না। তা সত্ত্বেও তোলাবাজ মস্তান বাহিনী চড়া দরে তোলা তুলছে। তৃণমূলের বড় সারির নেতাদের তোলাবাজদের মাথায় হাত রয়েছে বলেই সরকারি নির্দেশকে অমান্য করে তোলা আদায় হচ্ছে।
মানিকচক বিধানসভার বিধায়ক তথা প্রাক্তণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন এমন কোন সিদ্ধান্ত প্রশাসন থেকে নেওয়া হয় নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও গঙ্গা নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে মৎসব্যজীবি জলকর মকুব করেছেন। তবে কেন এমন হচ্ছে তা প্রশাসনকে জানাবো। ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেন তিনি। মালদা জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, নদী কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। বেআইনিভাবে টাকা তোলার অভিযোগ পেয়েছি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।