জয় শ্রীরাম, জয় হিন্দ এখন ডাকঘর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।সে কী লাইন রে বাবা! এরপর জয় জগন্নাথ আসছে। টুকুনের কি রাজনৈতিক এবং সামাজিক তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত বাড়ছে?
জয় শ্রীরামের উপকারিতা
তমাল সাহা
টুকুন আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এলো।
বাবা! সবকিছুই কি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে?
আমি বলি, তা দেখতে হবে কেন?
টুকুন বলে, তা যদিও দেখো, তাহলেও তার একটা সামাজিক উপযোগিতা আছে।
এই যে জয় শ্রীরাম!জয় হিন্দ! জয় মা-কালী! জয় বাংলা— শব্দ নিয়ে এত শোরগোল উঠেছে তাতে কি আমাদের লাভ হচ্ছে না?
আমি বলি, এতে ধর্ম ও রাজনীতির জিগির উঠছে।
টুকুন বলে, তুমি তো একে সংকীর্ণ একদৃষ্টিতে দেখছো।
আমি বলি কেমন? আমাকে বোঝা তো!
টুকুন বলে, দেখেছো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। দেশের লক্ষ লক্ষ লোক পোস্ট অফিসে যাচ্ছে। পোস্টকার্ড কিনছে। পোস্টকার্ডের গুরুত্ব বেড়ে গেছে।
মানুষ তো পোস্টকার্ডে চিঠি লেখাই ছেড়ে দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ লোক এখন এই স্লোগান লিখছে। তাদের হাতের লেখা প্র্যাক্টিস হচ্ছে। অক্ষর সুন্দর হচ্ছে। অন্যকে জিজ্ঞাসা করে বানান ঠিক করে নিচ্ছে। অনেকের লিখতে লিখতে লাইন বাঁকা হয় তা সোজা হয়ে যাচ্ছে। কেউ বাংলায় লিখছে, তো কেউ হিন্দিতে লিখছে। দুটো ভাষাই চর্চা হচ্ছে। এইভাবে বর্ণ ভাষা শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে।
আরো একটা উপকারিতা আছে,বাবা। এই স্লোগানগুলো সজোরে উচ্চারণ করলে গলারও রেওয়াজ হয়ে যাচ্ছে!
এতোদিন শুধু শ্রী রামচন্দ্রের দরবারে যাচ্ছিল মানুষ। এখন রামচন্দ্রকে পোস্টে চলে যেতে হচ্ছে রাজ্যের দরবারে। কী অবস্থা!
আরে! টুকুন বলে কী! আমি তো হতবাক!
টুকুন বলে, বাবা! এরপরেও তুমি বলবে? এক ফুল,দুই ফুল খারাপ দল ? তারাই তো এই চর্চাটা মানুষের মধ্যে নিয়ে এলো।
তুমি ধর্মটর্ম- রাজনীতি-ফাজনীতি ছেড়ে বিষয়টা একটু ভেবে দেখো!
এইভাবে ভাষা-বর্ণ শেখা যায় নাকি?
টুকুন বলে,এই পোড়া দেশে এভাবে কিছু তো হলো! মন্দ কি?
আমি টুকুনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।