অবতক খবর ১৮ ডিসেম্বরঃ অদ্ভুত একটি শব্দ সংখ্যালঘু। দুনিয়ায় জুড়ে মানুষ। মানুষ শব্দের সঙ্গে সংখ্যালঘু শব্দটি আগে বা পরে কিভাবে যুক্ত হয়? এটা খুব সহজ ও সরল ভাষায় মানবতার অপমান। সংখ্যালঘু শব্দটি ভারতীয় সংবিধানেও ঢুকে গিয়েছে। এটা কিভাবে ভারতীয় সংবিধানে গৃহীত হয় সেটাও তো একটি তাজ্জব বিষয়! যত পণ্ডিতপ্রবর সংবিধানবিদ হোক না কেন মানুষ কোনদিনই সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু হতে পারে না, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারলেন না কেন বোঝা যায় না। তাহলে কি হতে পারে? তা হতে পারে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং আর্থিকভাবে এগিয়ে থাকা মানুষ। এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের অনেক ক্ষেত্রে প্রান্তিক অন্ত্যজ মানুষ বলা হয়ে থাকে। মানুষ কি করে প্রান্তিক বা অন্ত্যজ হয়?
মানুষের একটাই ধর্ম মানব ধর্ম। তার কি সম্প্রদায়গত ধর্ম অথবা জাত বর্ণ দলিত এসব কোনো বিষয় আছে নাকি? রাষ্ট্র যাদের দলন করে তারাই আসলে দলিত। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে মানুষ হিন্দু মুসলমান জৈন বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলেও কখনই সংখ্যালঘু নয়। মানুষ ব্রাহ্মণ মুচি মেথর দলিত এসব কিছুই হতে পারে না।
রাষ্ট্র সংঘ ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে বিশ্ব সংখ্যালঘু অধিকার দিবস হিসেবে সূচিত করেছে। নিশ্চিত ভাবে ভারতবর্ষের এই মসজিদ বিধ্বংসী কান্ড এবং সম্প্রদায়িকতাকে প্রাধান্য দিয়েই আন্তর্জাতিকভাবে এই দিনটি পালন করা হয় অর্থাৎ এমন একটি দিন রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ভারতবর্ষের এই ধ্বংসাত্মক কাণ্ডটির জন্য। প্রশ্ন থেকেই যায় এই ঘটনাটি না ঘটলে কি এমন একটি দিনের চিন্তা চিন্তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মাথায় উদয় হতো?
ভারতের বিভিন্ন স্থানে একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা, খুন তো বটেই নারী ধর্ষণের ঘটনা অন্যদিকে হিন্দু হলেও দলিত হিসাবে তার উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে। এটা নিশ্চিত ভাবে লজ্জার বিষয়।
নিজেদের ক্ষমতার দখল রাখবার কারণে রাষ্ট্রশক্তি বা রাজনৈতিক শক্তিগুলি ধর্মী ও সুড়সুড়ি দিয়ে থাকে।
ভোট আমাদের জীবনে একটা সর্বগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে। এই ভোটকে কেন্দ্র করেই তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা মুহূর্তের মধ্যেই টুপি পাল্টে ফেলেন, হিজাব পরেন দোয়ার মুদ্রা দেখান। এইভাবে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করেন। ফলত সংখ্যালঘু শব্দটি ভারতের মাটিতে জায়মান থাকবেই। ভারতবর্ষ মহান বৈচিত্রের দেশ। বৈচিত্রের মধ্যেই ভারতের সংহতি। কায়েমি স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলি সংখ্যালঘু শব্দটি বজায় রাখতে চায়। একমাত্র ভোটের স্বার্থেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে।