বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খববর, ১ আগস্ট :: এবার রাজ্য জয়ের পর তৃণমূলের টার্গেট ২০২৩-এ দিল্লি। তাই অন্য রাজ্যে দলকে চাঙ্গা করার বা সংগঠন তৈরি করার আগে নতুন করে নিজের ঘর গুছিয়ে নিতে চলেছে তৃণমূল। তাই এই ঘর গোছানোর কাজ আগে ভাগেই সেরে নিতে চায় দল। তাছাড়া যে শিক্ষা শুভেন্দু অধিকারীর দল ত্যাগ থেকেই শিক্ষা নিয়ে নেত্রী দলকে আরো সাংগঠনিকভাবে বেশি সক্রিয় করতে উদ্যোগী হয়েছেন।তিনি এখন ‘এক ব্যক্তি এক পদ নীতি’ অবলম্বন করে ব্যক্তিকে নয় দলকে শক্তিশালী করার দিকে নজর দিয়েছেন । তাই এবার বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক সংগঠনকে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে চান তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যেসব জেলাগুলি বড় বা অনেকগুলি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে সেগুলিকে ভেঙে কোথাও দুটি বা কোথাও তিনটি জেলা কমিটি তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর। এই সূত্র ধরেই উত্তর ২৪ পরগণা তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যিনি একা দায়িত্ব এতদিন সামলে এসেছেন, তাঁর জায়গায় আনা হচ্ছে তিনটি জেলা সভাপতিকে। সোজা কথায় বলতে গেলে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটি যেটি ৩৩টি বিধানসভাকে নিয়ে রয়েছে সেটি ভেঙে তিনটি জেলা কমিটি তৈরি করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী উত্তর দমদম ও বারাকপুরলোকসভা কেন্দ্রকে এক করে জেলা কমিটি করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হচ্ছে দক্ষিণ দমদম, বারাসাত ও বিধাননগর এলাকাকে একসঙ্গে নিয়ে এবং তৃতীয় জেলা কমিটি হচ্ছে বসিরহাট ও বনগাঁ লোকসভা অঞ্চলকে এক করে। অর্থাৎ একটি জেলা কমিটি নয় এবার তিনটি জেলা কমিটি গড়ছে দল। আর এই তিনটি জেলা কমিটির 3 জন আলাদা আলাদা জেলা সাংগঠনিক সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছেন ।
এবার প্রশ্ন, এই তিন জেলার সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন? কারা কারা দৌড়ে রয়েছেন? কে কোথায় হচ্ছেন নতুন জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ? তা নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলীয় কর্মী নেতাদের মধ্যে।
সূত্রের খবর, দমদম-ব্যারাকপুরকে নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হচ্ছে তাতে কয়েকজন আশাবাদী। তবে এই অঞ্চলের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে নাম উঠে আসছে তিনি হচ্ছেন পার্থ ভৌমিক। যদিও অনেকেই বলছেন যে, দমদম- ব্যারাকপুর কমিটির অধ্যক্ষের দৌড়ে প্রবীণ নেতা নির্মল ঘোষ এবং তাপস রায়ও রয়েছেন। পাশাপাশি নতুন করে বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর নামও কোন কোন মহল থেকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
১. মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় ও জেলার প্রবীণ নেতা হিসেবে নির্মল ঘোষ অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু নির্মল ঘোষ তৃণমূলের চিফ হুইপ দায়িত্বে। তিনি ক্যাবিনেট র্্যাঙ্ক সমতুল্য পোস্ট হোল্ড করেন। তাই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেতে গেলে তাঁকে চিফ হুইপের পদ ছাড়তে হবে। তাছাড়া এবার দল 70 ঊর্ধ্বে কোনো নেতাকে দলের সভাপতি করবেনা । তাই এই দুটি কারণে জেলা সভাপতির দৌড়ে থেকে তিনি ছিটকে যাচ্ছেন।
২. দ্বিতীয় নাম রয়েছে প্রবীণ নেতা তাপস রায়ের। তিনি ডেপুটি চিফ হুইপ। তাছাড়া তিনি কলকাতাবাসী ও কলকাতার রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত থাকেন। জেলা রাজনীতিতে তেমন মাথা ঘামান না। এই সূত্র ধরে তাপস বাবুও এই লড়াই থেকে ছিটকে যেতে পারেন।
৩. তৃতীয় সবচেয়ে বড় দাবিদার পার্থ ভৌমিক। দমদম থেকে ব্যারাকপুর পুরোটাই তাঁর নখদর্পনে, তিনি ঘেঁটে বেরিয়েছেন এলাকা। তাছাড়া জেলা রাজনীতিতে তিনি দক্ষ। দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটি তৈরি হলে সভাপতি পদের জন্য তিনি সবচেয়ে ফিট ম্যান। তাই এই দায়িত্ব তিনিই যে পেতে চলেছেন সেটা মোটামুটি নিশ্চিত।
অন্যদিকে এই জেলার অধ্যক্ষের দৌড়ে সুবোধ অধিকারীর নামও কিন্তু পেছন দরজা থেকে উঠে আসছে। কারণ ব্যারাকপুর রাজনীতির ভিত যখন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর একেবারে নড়েচড়ে বসেছিল, ব্যারাকপুর অঞ্চলে যখন বিজেপির কাছে তৃণমূল পরাস্ত হয়েছিল। স্বয়ং পার্থ ভৌমিক ও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন ও একের পর এক প্রায় সকল তৃণমূল নেতা-কর্মী দল ত্যাগ করে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন, তখন এই ব্যারাকপুর অঞ্চলে দলকে উদ্ধারের কাজে হাত লাগান সুবোধ অধিকারী। অসময়ে দলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে একের পরে এক সমস্ত পৌরসভা এবং ব্যারাকপুরের বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলর নেতা থেকে শুরু করে কর্মীদের উদ্ধার করে আবার দলকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে দেখান সুবোধ ।তিনি দলের সংগঠন কি করে করা যায়, সংগঠনকে কিভাবে দাঁড় করানো যায় সেটাও কিন্তু দলকে হাতে কলমে করে দেখিয়েছেন। এই জায়গা থেকে সুবোধের নাম যদি অধ্যক্ষ হিসেবে নেত্রী ঘোষণা করেন তাহলে এটা কিন্তু কোন আশ্চর্যের বিষয় হবে না। তবে সুবোধ অধিকারী এ নিয়ে জানান যে, তিনি জেলা সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নয়, বরং পার্থবাবুর সহযোগী হিসেবে কাজ করতে তিনি বেশি আগ্রহী।
তাছাড়া বারাসাত-বিধাননগর নিয়ে যে জেলা কমিটি গঠন হতে চলেছে সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন তার নাম নারায়ণ গোস্বামী এবং বনগাঁ-বসিরহাট নিয়ে তৃতীয় সাংগঠনিক জেলা কমিটি তৈরি হতে চলেছে তার মধ্যে জেলা সভাপতির দায়িত্বে অনেকটাই এগিয়ে গোপাল শেঠ।