আজকের দিনে বিবেকানন্দ প্রয়াত হন। তার সঙ্গে কথা বলি কিছু…

তোমার মৃত্যুদিনে কিছু কথা
তমাল সাহা

তুমি চলে যাবার পর
পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে
একশো ঊনিশ বছর
কিন্তু তুমি যা বলেছ সে কথা শোনেনি কেউ।
আরো অমারাত্রি এসেছে নেমে
ভারত মহাসাগরে সক্রোধে ধাবমান উত্তাল ঢেউ।
কেটে গেছে লজ্জাকর দিনরাত
দু’লক্ষ চার হাজার পঁচাশি দিনের প্রহর।
ভারতীয় জনতার কে নেবে খবর?

পরে বলছি অনেক কথা
এখন আমার কথা একটু শোনো।
আচ্ছা, তোমরা মরে গেলে
তোমাদেরকে কেউ বলে না ‘মড়া’– কেন?
কেন বলে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ, প্রয়াণ অথবা মহাপ্রয়াণ!
অথচ আমরা চলে গেলে কেন বলে,মরেছে! ভালোই হয়েছে,ছিল একটা শয়তান!

তুমি বলেছো, গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভালো– ওরা মেনেছে সেকথা।
ক্লাবগুলোকে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান।
তুমি তোমার সময়ে শুনেছো কি কাটমানি শব্দটি,
যেটি এখন বড় মহান!

তুমি কি জানো
এখনকার পরিবেশ হাওয়ায়
ক্লাবে ক্লাবে অর্থ দিলে ভোটে বুথ পাহারায়
মস্তান পাওয়া যায় !
খালি পেটে ধর্ম হয় না— বলেছিলে বুঝি!
এখন আমরা বাবরি মসজিদের ভেতর রামচন্দ্র আর দীঘায় জগন্নাথকে খুঁজি।

তুমি বলেছিলে, বাংলা শব্দ নিয়ে অতো প্যাঁচপয়জার করবে না।
কলকাত্তাইয়া ভাষায় লিখবে, বলবে সহজে
যেন সাধারণ মানুষ বোঝে।
সাধারণ ভাষায়, জীব সেবাই শিব সেবা– বলেছিলে তুমি।
আজব জন্মভূমি!
এখন এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ত্রাণ।
ত্রাণ মানে চাল ও ত্রিপল চুরির অভিযান।

কোয়ারেন্টিন শব্দটি প্রথম দেখেছি
আমি তোমার লেখায়।
কোয়ারেন্টিন–কোভিড-এ এখন কত মানুষ বেওয়ারিশ জানো, অপমানিত মৃত্যুশয্যায়!
তুমি বিশ্ব পরিব্রাজক, ভারতবর্ষে দেখোনি
অগণন করোনা-লাশ গাঙ্গেয় প্রবাহে ভেসে যায়….

তুমি তো বলেই খালাস
নতুন ভারত বেরুক চাষার কুটির,
জেলে মালা মুচি মেথরের ঝুপড়ি থেকে
ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে
কারখানা ঝোপঝাড় জঙ্গল পর্বত থেকে।
তোমার মৃত্যুর একশো উনিশ বছর পেরিয়ে যায়
এখনো সেই ভারত বেরুলো কোথায়?

তুমিও কম চালাক নও।
‘বেরুক’ বলে অন্যের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে
ভাববাচ্যে শেষ করে দিলে কথা।
কিভাবে বেরুবে তা বাতলালে না,
দিলেনা কোনো বার্তা?

ইতিহাস তো পড়েছো তুমি!
ভুলে গেলে সশস্ত্র আদিবাসীদের হুল,
কৃষকদের ইজ্জতের লড়াই?
তুমি সংঘর্ষ-নির্মাণের কথা কি গিয়েছিলে ভুলে?
রাষ্ট্র তোমার জন্মদিন-মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে জাতীয় পতাকা তোলে,
তোমার প্রতিমূর্তিতে পুষ্পমাল্য ঝোলে।

সে কী আনন্দ!
পেটে নেই ভাত,আমরা উলঙ্গ।
সমস্বরে চিৎকার করে বলি,
জয়তু বিবেকানন্দ!