বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, 25সে জুলাই :: শুভেন্দু অধিকারী কান্ড অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল থেকে শিক্ষা নিয়ে পিকের পরামর্শ মেনে এক ব্যক্তি একপদ নীতি গ্রহণ করার ঘোষণা ইতিমধ্যেই করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর জন্য তৃণমূলের যে ক্ষতি হয়েছে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন নেত্রী । কারণ যে শুভেন্দু কে তিনি মাটি থেকে মসনদে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই শুভেন্দু এখন তার প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শত্রু নয় এমন শত্রু যে প্রতি মুহূর্তে পদে পদে তার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে তার চোখে কাটা হয়ে ফুটছে।
তৃণমূল সুপ্রিমো তাকে এতটাই ক্ষমতাওয়ান করে তুলে দিয়েছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রীর পর শুভেন্দুকে রাজ্যের দ্বিতীয় কমান্ড ভাবতে শুরু করেছিল তৃণমূলের নিচুতলার নেতা ও কর্মীরা। আর ভাববে না কেন ? নেত্রী তাকে তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী করার পাশাপাশি 33টি ছোট বড় কমিটির চেয়ারম্যান করে রেখেছিলেন। শুধু এখানেই শেষ নয় । শুভেন্দু 5টি জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। তাই এই সমস্ত ক্ষমতার জোরে শুভেন্দু নিজেকে বাংলার সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী নেতা মানতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ক্ষমতাতে তিনি নিজেকে রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ভাবতে শুরু করেছিলেন। আর এই ক্ষমতার জেরেই তিনি তৃণমূলকে ভেঙে দুভাগ করে দেওয়ার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এত বেশি ক্ষমতা ও পদ দেখেই বিজেপি তাকে টার্গেট করে ও তাকে নেত্রীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার তৈরি করে ফেলে। ভাবা হয়েছিল শুভেন্দুর প্রভাবে হয়তো সহজেই বিজেপি ছটি জেলায় জয় পেয়ে যাবে আর সামান্য ছোটখাটো খেলা হলেই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি কিন্তু বাংলার জনগণ তা করতে দেননি।
সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী লড়াই ও তার নাছোড় মনোভাব দেখেই বাংলার মানুষ ও তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ।নেত্রী ভাঙ্গা পা নিয়েই রাজ্যে জেলায় জেলায় ছুটে বেড়িয়েছেন, অভিযান চালিয়ে গেছেন । আর অন্য দিকে সুযোগ সুবিধার সন্ধানীরা একের পর এক দল বদল করে বিজেপিতে ঢোকা শুরু করেন। দলবদলুদের এমন পাল্টি দেখেই বাংলার মানুষ শেষ পর্যন্ত রাজ্য পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রায় দেন ও তৃণমূল নেত্রীকে তৃতীয়বারের জন্য নির্বাচিত করে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে দেন।
তবে এই নির্বাচন ও দলবদল এর মধ্যে দিয়েই নেত্রীর বোধোদয় হয়েছে। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন ।এক ব্যক্তিকে এতটাই ক্ষমতাবান তৈরি করে দিয়েছিলেন যে , এই ক্ষমতা জেরেই সে নিজেকে সর্বশক্তিমান ভেবে নেয়।
ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে, তৈরি না হয় । ফের কোন নতুন শুভেন্দু দল ভাঙার মতন ক্ষমতা অর্জন করতে না পারে বা ফের কোন শুভেন্দু নিজেকে দল থেকে বেশি শক্তিশালী মনে না করতে পারে তার জন্যই এক ব্যক্তি একপদ নীতির ঘোষণা করেছেন নেত্রী।
এক ব্যক্তি একপদ নীতি কে কার্যকর করে তুলতে এখন যে জেলাগুলিতে সভাপতির মন্ত্রী হয়েছেন সে সব জেলা সভাপতিদের সরিয়ে তাদের জায়গায় নতুন সভাপতি আনার প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়াও অনেক নেতা একাধিক সহকারী পদে আঁকড়ে বসে রয়েছেন তাদের সেই সব পদ থেকে সরিয়ে নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে দল। তাছাড়া ও বিশেষজ্ঞদের মতে যেসব জেলা বড় রয়েছে সেইসব জেলাকে ভাগ করা হচ্ছে যাতে দলকে আরও ভালোভাবে সংগঠিত করা যায়। তাই দলের স্বার্থে , দলীয় সংগঠনের স্বার্থে যেসব জেলা ভাগ করা হচ্ছে তাতে রয়েছে উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর ও অন্যান্য।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য এক একটি জেলা তিনটে পা দুটো ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী উত্তর 24 পরগনা কে 3টি ভাগে ভাগ করতে চলেছে তৃণমূল। দমদম ও ব্যারাকপুর সংসদীয় এলাকায় মিলিয়ে একটি জেলা করা হচ্ছে। তাছাড়া বারাসাত সল্টলেকে নিয়ে আরেকটি জেলা কমিটি এবং বনগাঁ বসিরহাট কে নিয়ে তৃতীয় জেলা কমিটি তৈরি করতে চলেছে তৃণমূল বলে জানা গেছে। একই ভাবে দক্ষিণ 24 পরগনা নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি ও হাওড়া জেলা 2টি জেলা কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।