আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর :: ৩০শে,নভেম্বর :: কোলকাতা :: পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৬.১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ ২০১১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ১০.০২ শতাংশ ভোট৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২টি আসন পায়৷

দার্জিলিং এবং আসানসোলে জয়ী হয় বিজেপি৷ ভোট পায় ১৭.০২ শতাংশ৷ ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ১২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট ৪০ শতাংশেরও বেশি৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ৪৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ মাত্র ২ শতাংশ ভোট কম পেয়েই ১২টি আসন কমে গিয়েছে তৃণমূলের৷২০০৯ থেকে ২০১৯ – দশ বছরে রাজ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি৷

১৭ তম লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছিলেন, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাওয়া ২৭ শতাংশ ভোট বেড়ে যদি ৪৫ শতাংশ হয়, একমাত্র তাহলেই পশ্চিমবঙ্গে ২২টি লোকসভা আসন পেতে পারে বিজেপি৷

রাজনৈতিক মহল এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতামত ছিল বাংলায় বাড়তি ১৮ শতাংশ ভোট জোগার করা বিজেপির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন কাজ হবে৷ আপাতত দিলীপ ঘোষরা সেই হিসাব উল্টে দিয়েছেন৷ ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে ১৮টি লোকসভা আসন দখল করেছে বিজেপি৷

যদি বিধানসভাওয়ারি ফলাফলের বিচার করি তাহলে দেখা যাবে রাজ্যে ১২৮টি বিধানসভায় ‘লিড’রয়েছে বিজেপির৷ ১৫৮টি বিধানসভায় ‘লিড’রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের৷ ১৫টি গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্রে ভালো ফল করেছে বিজেপি৷ বাকি ১২টি গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ভালো ফল করেছে৷ রাজ্যের ১২টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লোকসভার ৯টিতে ভালো ফল করেছে তৃণমূল৷

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পঞ্চায়েত নির্বাচনে একদল তৃণমূলকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা গিয়েছে৷ তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই শাসকদলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিজেপি নেতাদের হাত ধরে (বিশেষত মুকুল রায়) দলে দলে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছে ৷

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন জমা, প্রত্যাহার থেকে শুরু করে ভোটপর্ব – এক বেনজির সন্ত্রাসের মুখ দেখেছে বাংলা৷ অনেকেই মন্তব্য করেছেন – বাংলায় এই রকম রক্তাক্ত নির্বাচন শেষ কবে হয়েছে তা মনে করা যায় না৷

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩ শতাংশ আসনে নির্বাচিত হয়েছিল বিজেপি প্রার্থীরা৷ ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৭ শতাংশ৷ ২৪ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি নবান্নে শাসককে রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছিল৷

শাসকদল ভাবতে শুরু করেছে, সারা বাংলায় কত ‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূল’রয়েছে? ২৭ শতাংশের মধ্যে বিজেপির আদর্শগত ভোট কতটা ? কতটাই বা তৃণমূলের ঘরের ভোট কেটেছে গেরুয়া শিবির ? তৃণমূলের বন্ধুরা দলের ভিতরে থেকে মুকুল রায়কে সাহায্য করেছে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে৷

এবার যদি রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলের দিকে তাকাই তাহলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত শাসক দল কিছুটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে পারে বা দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে হয়তো কিছুটা ভোকাল টনিক দিতেই পারেন কিন্তু যদি শতাংশের বিচারে যান তাহলেই কিন্ সুখনিদ্রা উড়ে যাবে রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর |

এই বিগত দশ বছরে বিজেপি তাদের ভোট বাড়িয়েছে ২০০৯ সালের ৬.১৪ শতাংশ ভোট এখন ২০১৯ শে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ দশ বছরে রাজ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি৷