অবতক খবর,৬ অক্টোবরঃ বীরভূমের দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে শশ্মান কালীর আজ নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে সুচনা হয়ে গেলো কালি বন্দনার দিন গোনা শুরু। গত কালই বিজয়া দশমী পেরিয়েছে। বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে এখন বিশাদের সুর। উমাও স্বর্গে দিয়েছে পাড়ি। তার চলে যাওয়াকে ভুলে আবার আরেক মায়ের আসার প্রস্তুতি শুরু করে দিল আপামর বাঙালি।
দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরের শতাব্দী প্রাচীন শশ্মান কালিকে আজ নিরঞ্জন করা হল প্রথা মেনেই। জাগ্রত এই দেবীকে আজ একাদশীর দিন নিরঞ্জন করে ত্রয়োদশীর দিন মায়ের কাঠামোতে মাটি দেওয়া হবে। তবে শশ্মান কালির আজ নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা এক বৈচিত্রময় হয়ে থাকে। যা দেখার জন্য আশেপাশের গ্রাম গুলো থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভীড় জমায় মন্দির প্রাঙ্গণে। দাস পরিবারের সদস্য গুরুপদ দাস জানান, এই শ্মশান কালীর পুজো করে থাকেন সারা বছর ধরে এলাকার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
শুধু পুজো নয়, তারাই গড়ে থাকেন মায়ের মূর্তিও। কিন্তু বিসর্জনের দায়িত্বে থাকেন দাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। শ্মশান কালী বিসর্জন ঘিরে এই একাদশীর দিন এলাকার দাস পরিবারের মধ্যে দেখা যায় আলাদা উৎসাহ-উদ্দীপনা, বাড়িতে বাড়িতে ভিড় জমান আত্মীয়স্বজনেরা। এই বিসর্জন ঘিরে পাহাড়েশ্বর শ্মশান চত্বরে বসে একদিনের জন্য মেলাও। তবে এই দাস পরিবারদের আজকের দিনটি হলো সবথেকে বড় আনন্দের দিন, কারণ তারা সারা বছর পর আজকের দিনটিতে মায়ের বিসর্জনের অধিকার পান।
তিনি আরও জানান, “কোন এক বছর বিসর্জনে বিলম্বিত হয়, কারন সেই বছর বিসর্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অন্য একটি সম্প্রদায়কে। কিন্তু সেই সম্প্রদায়ের হাতে মা যেতে চাননি। অবশেষে পুরোহিত বুঝতে পেরে শেষমেশ দাস পরিবারদেরই আবার দায়িত্ব দেন বিসর্জনের। তারপর থেকেই বংশপরম্পরায় একি রীতিতে বিসর্জন হয়ে আসছে।” মায়ের মুর্তি এতো বিশালাকার যে তাকে লরি বা কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া যায় না।
তাই মন্দির থেকে কিছুটা দুরেই রুজের পুকুরে নিরঞ্জন করা হয়। সেও আশ্চর্যজনক ভাবে। হ্যা, এই বিশাল মূর্তিটিকে গাছের গুঁড়ির উপর চাপিয়ে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস মায়ের মাহাত্মের কারণে এটা সম্ভব। যেখানে হাজার হাজার মানুষ দড়ি ধরে টান দিয়ে নড়াতে পারে না তখন মাকে ঝাঁটা বা গালি গালাজ করলে অনাসেই এগিয়ে যায় মূর্তি। এই দৃশ্য দেখার জন্য একাদশীর দুপুর থেকে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমায়। তবে এবছর কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে দাস পরিবার। সময়ের কথা মাথায় রেখে মাকে আর গালি গালাজ করা হয় না।
পাশাপাশি করোনা বিধির কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাত্র আর কিছু দিন বাকি কালি পুজোর। পুরো দমে মায়ের নতুন কাঠামো দিয়ে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে ত্রয়োদশীর দিন থেকে।