দ্বিতীয় পর্ব : নৈহাটিতে “ধান্দা করতে একটাই দল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চল”।

বিনয় ভরদ্বাজ : অবতাক খবর, ১০ই ডিসেম্বর :: নৈহাটিতে এখন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের পর্ব চলছে। যেটা গতকাল আমরা বলেছিলাম সেটাই হলো। বিষ্ণু অধিকারী নেতৃত্বে বহু বিজেপি কর্মী সমর্থক বিজয়নগর এন আর সি প্রতিবাদ মঞ্চে তৃণমূলে যোগদান করলেন। দলে যোগদান করেই উপহার পেলেন বিষ্ণু। তার হাতে নৈহাটীর হকারদের দায়িত্ব তুলে দিলেন পার্থ ভৌমিক। এক মঞ্চে এত সংখ্যক বিজেপি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নৈহাটীতে যোগদান এই প্রথম । যদিও নৈহাটিতে ধাপে ধাপে ইতিমধ্যে প্রায় সবকটি পার্টি অফিস ও ক্লাব উদ্ধার করে নিয়েছে তৃণমূল।

বিজেপি থেকে যারা তৃণমূলের ফিরছেন তারা কোনো আদর্শগত কারণে বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের নিরিখে বা পার্থ ভৌমিককে ভালোবাসা বা আদর্শগত কারণে তৃণমূলে ফিরছেন, এটা মোটেই নয়। কারণ যারা ফিরছেন তারা ধান্দার জন্যই ফিরছেন। বিধায়ক পার্থ ভৌমিকও তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সব নিয়ম নীতি আদর্শ ত্যাগ করে ফেলেছেন। মন উজাড় করে দিয়েছেন। যে যা চাইছে তাতেই পার্থবাবুর একটাই উত্তর, হ্যাঁ! চলে আয়। তাই এখন নৈহাটিতে একটাই কথা প্রচলিত হয়ে উঠেছে – “ধান্দা করতে একটাই দল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চল”।

এবার আসুন দেখে নেই 23 শে মে-এর পর তৃণমূলকে একেবারে উজাড় করে খালি করে দিয়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া এই ধান্দাবাজরা এখন কিসের লোভে বা কোন অফারের জন্য তৃণমূলে ফিরেছেন ।

সবার আগে নৈহাটি গৌরীপুর এলাকার মিঠুন পাশওয়ানকে নিয়ে কথা বলি। মিঠুন বিজেপিতে যোগ দিয়েই গণেশের ডান হাতে হয়ে উঠেছিল। তাঁর দলে ছিল  প্রায় শতাধিক যুবক  । মিঠুনের আতঙ্কে এলাকায় সমস্ত তৃণমূল কর্মীরা বিজেপিতে শামিল হয়েছিলেন। প্রায় এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছিল । কিন্তু মিঠুনকে পার্থ ভৌমিক ফিরিয়ে আনতে অফার দেন আর এই অফারে মিঠুন ফিরেও আসে। মিঠুনকে দাদাগিরি গুন্ডাগিরি ছেড়ে ব্যবসার জন্য অফার দেওয়া হয়েছিল।

তাকে বলা হয়েছিল তৃণমূলে ফিরলে তাকে কয়েকটি বেআইনি ঠেক, কাউ-এর ব্যবসা থেকে ভাগ দিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও মিঠুন পাশওয়ান ও তার ছেলেদেরকে এলাকার সমস্ত কন্ট্রাকটারি ও ঠিকাদারির কাজগুলো  দেওয়ার কথা হয়েছিল। মিঠুন দলবল নিয়ে ফিরে এসেছে, কিন্তু কাউ এখন তার কোনো ব্যবসা মিঠুনকে দিতে রাজি নন। উল্টে মিঠুনের ছেলেদের দলে নিয়ে মিঠুন ও তার ভাইকে বেধড়ক পেটায় কাউ।

এবার সম্রাট রায় চৌধুরীর কথায় আসি। সম্রাটকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে জয়েন করানোর জন্য ঠিকাদারি ও চাকরিতে তার ছেলেপুলেদের কোটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সম্রাটের দাবি ছিল সে যুব সভাপতি হবে। তবে যুব সভাপতির বদলে তাকে আপাতত নৈহাটীর যুব সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ক্যাজুয়ালে তার ছেলেদের চাকরি ও টেন্ডারের কাজ এখনো  দেওয়া বাকি।  ১৯ নম্বর ,২০ নম্বর ২১ -২২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা জুড়ে সম্রাট ও তার ছেলেদের দাপট। সে বিজেপি থাকাকালীন সনৎ দে-র মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

এবার কথা বলি হরে রাম সিংয়ের কথা। হরে রাম অর্জুনের খাস লোকের মধ্যে একজন। নৈহাটী ১১ নম্বর ওয়ার্ড ও হাসপাতাল চত্বরে হরেরাম-এর ব্যাপক প্রভাব। হরেরামকে দলে ফেরানো হয়েছে নৈহাটি মালগুদামের লোডিং আনলোডিং-এর সমস্ত দায়িত্ব তাকে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে।

বিজেপি ত্যাগ করে সমস্ত দলবল নিয়ে তৃণমূলে শামিল হওয়ার জন্য শান্তনু পাই ও বাবলু দে কে অটো-টোটো পারমিশন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতেই ছেড়ে দেয়া হবে অটো-টোটোর নতুন রুটের কারবার। তারা দলবল নিয়ে এই লোভে অলরেডি তৃণমূলে যোগদান করে ফেলেছে কিন্তু এখনও তাদের পাওনা বাকি।

নৈহাটি স্টেশনে পূর্ব দিকের রেল কোয়ার্টার এলাকা ও কলেজ চত্বরের দায়িত্ব বাবিন ও শোভাদি  দের হাতে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি নেতা মনোজ সিংয়ের কাছ থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে তাকে জয়েন করানো হয়েছে তৃণমূলে। বাবিন ও বিষ্ণুর অধিকারীর মধ্যে ব্যাপক গন্ডগোল প্রথম থেকে। তাই একে অপরের বিরুদ্ধে তারা সবসময় মারদাঙ্গা করতে প্রস্তুত। তারা বিষ্ণুকে টিকতে দেবে না, এলাকায় চত্বরে ঢুকতেও দেবে না। সব রকম পুলিশি ও রাজনৈতিক মদত পাবে তারা। এলাকার কোয়ার্টারের কারবার ও অটো টোটোর কারবার ওরাই দেখবে।

তবে তাদেরকে কথা দেওয়া হলেও আজ বিষ্ণু অধিকারী ও তার দলকে তৃণমূল জয়েন করান পার্থ ভৌমিক,সনৎ দে ও সুবোধ। বিষ্ণুকে নৈহাটির হকারদের সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৈহাটি কলেজ চত্বরও বিষ্ণুদের দখলে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পার্থবাবু। অন্যদিকে বাবিনকেও একই দায়িত্ব একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় সংঘর্ষ অবধারিত। তবে আপাতত বাবিনকে খুশি রাখতে বিষ্ণুকে বিজয়নগরে নিয়ে গিয়ে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

বাবান ঘোষ, জামাই কার্তিক  যারা বিজেপি মণ্ডল সভাপতির ডানে বামে ছিল তাদেরকেও দলে ফিরিয়ে এনেছেন পার্থ   সুবোধ-রা। রাজেন্দ্রপুর ক্লাব দখল করা হয়েছে কয়েকজনকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এলাকার ভেড়ি ও মাছের বাজারের কারবার ছাড়া হাই রোডের কারবার দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকজন যুবককে ইতিমধ্যেই বিজেপি থেকে তৃণমূলের জয়েন করানো হয়েছে।

সূত্রের খবর বিজেপির জেলা সাংগঠনিক নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র-র দেওর পার্থসারথি পাত্র ওরফে পানুকে তৃণমূলে ফেরানোর জন্য বৈঠক হয়েছে। ইতিমধ্যে পানু পার্থ ভৌমিকের সাথে বৈঠক করে তার দলবলের ছেলেদের বিজেপি থেকে তৃণমূলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবার পানু পাত্রকে দলে আনার জন্য দর কষাকষি চলছে।

পার্থ ভৌমিক ও সুবোধ অধিকারীরা এই সমস্ত ধান্দাবাজদের দলে ফিরিয়ে এনে তারা ভাবছেন যে তারা মানুষের মন জয় করে ফেলেছেন। এবার নৈহাটি অঞ্চল উদ্ধার হয়ে গেছে কিন্তু বাস্তবটা আদৌ কি তাই! সাধারণ মানুষও কি মন পাল্টেছেন নাকি ফের এই সমস্ত সুবিধাবাদীদের দলে ফিরে আসার জন্য আবার তারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, সেটা কিন্তু সময়ই বলবে।