অবতক খবর,১৬ মার্চ,নদীয়া:- সামনেই দোল পূর্ণিমা। আর এই দোল পূর্ণিমা মানেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কীর্তনের আসর বসে। শ্রীচৈতন্যদেব এবং অদ্বৈত আচার্য স্মৃতি বিজড়িত নদীয়ার নবদ্বীপ শান্তিপুর ফুলিয়াতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নামকীর্তন হবে না, এটা কখনো হতে পারে? যদিও ফুলিয়ার উমাপুর গ্রামে ফাল্গুন মাসের প্রথম রবিবার থেকে চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার পর্যন্ত প্রায় একমাস ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে কংস বধ পর্যন্ত বিভিন্ন কাহিনী পালা গানের মাধ্যমে প্রতি সন্ধ্যায় করে থাকেন এই এলাকার লোকজন। গ্রামের বয়স্ক মানুষ থেকে যুবক কিশোররা পর্যন্ত এই একমাস ব্যাপী উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন।
এলাকার একটি মন্দিরে গ্রামের যুবকেরাই রাধাকৃষ্ণ সেজে কৃষ্ণের জন্মলীলা থেকে কংস বধ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা পালা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে চলে নাম সংকীর্তন। দিন আনা দিন খাওয়া গ্রামের মানুষদের সারাদিনের খাটাখাটনির পর সন্ধ্যের পরে এটাই একমাত্র বিনোদন। একমাস ব্যাপী বিভিন্ন পালাগান ,নাম সংকীর্তনের পরে কুঞ্জ মেলার মাধ্যমে শেষ হয় উৎসব। যদিও এই উৎসবের শুরু বাংলাদেশের ঢাকায়। বর্তমান যারা পালাগান করছেন, তাদের পূর্বপুরুষেরা সেখানেই প্রথম এই ধরনের উৎসবের সূচনা করেছিলেন। দেশভাগের পর তাদেরই কয়েকজন চলে এসেছিলেন ফুলিয়ার উমাপুর গ্রামে। এখানে এসেই পঞ্চবটি বৃক্ষের নিচে উৎসবের সূচনা হয়। প্রতিবছর এই সময় এই উৎসব হয়ে থাকে। একমাস ব্যাপী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রান্না হয় নিরামিষ। পালা গানের দলের কীর্তনীয়া অভিক রক্ষিত জানিয়েছেন,’ মেলার দিন প্রচুর মানুষের সমাগম হয়ে থাকে আমাদের গ্রামে। বাইরে থেকে আসা যে কোন মানুষ গ্রামের যেকোনো বাড়িতে গিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন।’
গতকাল ছিল শ্রীকৃষ্ণের রাস যাত্রা। কীর্তন লাইট মাইক অভিনয় বাজনা সবকিছুই গ্রামের আয়োজনে। 8 জন শ্রীকৃষ্ণ এবং 8 জন শ্রীরাধা সকলেই গ্রামের বালক অবশ্যই 18 বছরের নিচে। এটাই রীতি। আর তাই দেখতে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতীক্ষায় আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন।
রীতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর ধনী থেকে দরিদ্র চাকরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী প্রত্যেকে। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের যেকোনো কাজের সাথে যুক্ত থাকেন প্রত্যেক পরিবারের আট থেকে আশি সকলে। মহিলাদের হি সালে রান্নার কোন ঠিক-ঠিকানা থাকেনা , মেলায় বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করতে আসা দোকানে থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান দেখতে আসা ভক্তবৃন্দ কে কার আপ্যায়নে এসেছে সেটা বড় কথা নয়, আন্তরিকভাবে যেকোনো বাড়িতে ঢুকে পড়লেই মিলবে প্রসাদ। চিরাচরিতভাবে গ্রামের ছেলেরা নিয়ম-নীতি মেনে ধুতি এবং পাঞ্জাবি পড়ে অংশগ্রহণ করেন সমস্ত পরিচালনার কাজ।