নাৎসী বাহিনী
তমাল সাহা
তখন ট্রাক ছিলো, ওরা ছিলো –এখন বাইকে করে আসে
বড় অ্যাকশন করতে হলে
ম্যাটাডর করে আসে।
ট্রাক, ম্যাটাডর বা বাইক বড় কথা নয়। ওরা থাকে। ইতিহাসে ওদের একটা জায়গা থাকে। ইতিহাসে ওদের একটা জায়গা আছে।
ওরা এলো। মাথায় ফেট্টি বাঁধা ছিলো। তখনও ছিল–স্বস্তিক, মাঙ্গলিক চিহ্ন। এখনও থাকে। পতাকা উড়তে থাকে। রঙের হেরফের হতে থাকে ঢঙের হেরফের হয়না।
ওরা এলো বাইকে করে দল বেঁধে।
এক এক বাইকে দুজন
কোনোটাতে তিনজনও ছিলো।
উড়ে গেলো ছাদ
বারুদের দাগ লেগে রইল চাঙড়ে।
জানালা দরজা ভাঙছে সশব্দে।
আর যে পতাকাটা উড়ছিল, তার দিকে তাকালো একবার।হয়তো বা মায়ের সিঁথির সিঁদুরের সঙ্গে মিল ছিল, তাই কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল।
তারপর নেশাটা যখন মাথায় উঠলো, দন্ড ভেঙে পতাকাটা নামালো, ছিন্নভিন্ন করলো।
সোল্লাসে বলে উঠলো, ‘হের হিটলার! অন্যেরা বলল, লঙ লিভ ফুয়েরার!’
মুখ থুবড়ে পড়ে রইল পার্টি অফিস এবং পতাকা। ভাঙা জানালা দরজা নিয়ে চলে গেলো আরেকটি দল। মুফতে যা পাওয়া যায়!
আবার বাইক। দ্রুত গতি তার। ছুটলো– ইয়ামাহা, হিরো হন্ডা, সুজুকি, রয়্যাল এনফিল্ড। যে মানুষটা পড়শির পাশে দাঁড়ায়, ছুটে গেলো তার বাড়ি। কলাপসিবল্ গেট ভাঙলো। তারপর কাঠের দরজা। তুরন্ত উঠে গেলো সিঁড়ি দিয়ে উপরে।
এসব ভাঙছো কেন তোমরা?
আরে বান্..! ঈশ্বর আমাদের হাত দিয়েছে কি জন্যে?
এ তো গণতান্ত্রিক দেশ। আইন আছে। পুলিশ আছে।
আরে শালা! এ তো গণতন্ত্র মারাচ্ছে! আইন মারাচ্ছে! কিচাইন করে দেব তোর আইন। নেমে আয়, কুত্তার বাচ্চা!
এসব গালিগালাজ করছো কেন?
না নেমে এলে ভরে দেব। নাম শালা!
এসব নোংরা কথা বলছো কেন?
জ্ঞান মারাবি না! ঈশ্বর তো মুখ দিয়েছে কথা বলার জন্যই।
ঢুকে পড়লো ওরা হুড়মুড়িয়ে। এ তো দেখছি লেনিনের বাচ্চা! ওই দ্যাখ লেনিনের ছবি।
এ ছবি তোমরা চেনো?
চিনবো না শালা! বিদেশী মাল! লেনিন সরণি ফরণি সব শালা এবার ভাঙচুর করে দেবো!
লেনিনকে ওরা টেনে নামালো দেওয়াল থেকে। মেঝেতে মারলো আছাড়। ফ্রেম ভাঙলো। তবুও লেনিন অক্ষত রইলো। লেনিনকে ওরা লাথি মারলো।
এইসব কি করছো তোমরা?
আবে! বেল্লিকের বাচ্চা! বলতো ঈশ্বর আমাদের পা দিয়েছে কেন?
ওরা জামার কলার টেনে ধরলো মানুষটার। মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, এসব রাজনীতি করা চলবে না। আমরা যা বলবো তাই করতে হবে।
এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি তো বিধবা। এবার ছেলে মরা মা হতে চান কি? ছেলেকে সাবধান করে দিন। নাহলে আপনার ছেলে হড়কে যাবে।
তোমরা চাকরি করো না? মিটিং-এ মিটিং-এ ফুয়েরার কথা দিয়েছেন। শিল্পপতিদের সাথে বৈঠক করেছেন। দশ লক্ষের ওপর চাকরি হয়ে গেলো। তোমাদের হলো না?
এটাই তো আমাদের চাকরি।
হিম্মত কতক্ষণ থাকে। বেশি হিম্মত দেখাতে গেলে প্রাণ যায়। কখনও কখনও প্রাণের চেয়ে পলায়ন জরুরি। কিন্তু মানুষটি পালাতে পারলো না। তখন মোবাইল ফোন ছিলো না। এখন আছে।
ওরা জানালো, দানা ভরে দিয়েছি। এখন শহর জুড়ে রবীন্দ্রনাথ। ওদের মোবাইলে বেজে উঠলো গান,”আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে”।
ওরা চলল আরেক মহল্লায়।
হিটলারের কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গ নেই। হিটলার উভলিঙ্গ শব্দ।