মেয়ে বলল উৎসব শুধু বড়লোকি ব্যাপার নয় এর গুরুত্ব আছে। আমার মেয়ে কি বলছে, শুনুন।
নিউ ইয়ার: বাবা ও মেয়ে
তমাল সাহা
মেয়ে বড় হয়ে উঠছে।
আমার লেখার ঘরে হামেশাই ছুটে আসে।
— বাবা,ভেবে দেখলাম উৎসবের দরকার আছে।
তুমি বলেছিলে না, উৎসব সব বড়লোকি ব্যাপার!
ঠিক আছে…
তবে মা বলেছিল, কম বেশি মূল্যবোধ জেগে ওঠে উৎসবের সময়।
মূল্যবোধ কি, বাবা?
মূল্যবোধ হল মরাল ভ্যালুজ, নীতিবোধ।
এ হল গরিব দুঃখি মানুষের জন্য ভাবা, কিছু করা, তাদের পাশে থাকা।
— বাবা, তাহলে তো মা ঠিকই বলেছে!
তোমার মা তো সবসময়ই ঠিক কথা বলে।
— বাবা, সেই পুজোর সময়
তুমি মাকে দামি শাড়ি দিলে, আমাকে দামি পোশাক দিলে।
মা বলল,মুন্নির মাকে একটা শাড়ি কিনে দাও। ও বাসন মাজে তাতে কি? ও তো আমাদের আপনজনই হয়ে গেছে।
তখন আমি বললাম, বাবা, মুন্নিকেও একটা জামা দাও। আমাদের চেয়ে কম দামের হলেও তুমি দিলে তো!
তুমি বলেছিলে, এসব রাষ্ট্রের দায়।
বাবা, কবে রাষ্ট্র দেবে, কবে বিপ্লব হবে তার অপেক্ষায় কি থাকব আমরা?
আমরা দিলাম বড় কথা নয়।আমরা মুন্নিদের পাশে দাঁড়ালাম, ওরাও খুশি হল, আমাদেরও ভালো লাগল।
তুমি তো জানো না, মা আর আমি
নিউ ইয়ার বরণ করবো বলে
কেক, কমলালেবু কিনতে বেরিয়েছিলাম।
আমি বললাম, কিছু লজেন্স,কিছু সিঙ্গল কেক কিনে নাও না মা।
মা বললো, কি হবে?
আমি বললাম, আমাদের কবরস্তানের পাশে হরিজন পাড়া আছে। ও পাড়ায় অনেক ছোট ছোট বাচ্চা আছে ওদের দেব।
নিউ ইয়ার।তার উপর বড়দিন চলছে। রোদটা গাঢ় হয়ে উঠেছে তখন।
মা আর আমি ওইসব লজেন্স, কেক নিয়ে কবরস্তান মাঠে গেলাম।
কতসব বাচ্চা হইহই করে ছুটে এলো।
ওগুলো আমরা বিলি করে দিলাম।
এ বলছে, আমি পাইনি, আমায় দাও। ও বলছে,আমিও পাইনি।
দেওয়ার মধ্যেও আনন্দ আছে,বাবা।
বাবা, এটাকে কি মূল্যবোধ বা মরাল ভ্যালুজ বলে?
— বাবা, উৎসব বড়লোকি হলেও, দরকার আছে। মূল্যবোধকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের মধ্যে একটা সুস্থ ইচ্ছা তো জাগায়!
এই পেটটা যদি না থাকতো বাবা, পৃথিবীতে শাসকের আর কোন মূল্যই থাকতো না।
গরিবের খিদেকে পণ্য করেই ওরা রাষ্ট্র চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
কবে রাষ্ট্র পরিবর্তন হবে,কবে বিপ্লব হবে,বাবা!
আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।
দেখি মেয়েটা আমার
বেশ সোমত্ত হয়ে উঠেছে।