তমাল সাহা,অবতক খবর,৫ জুলাই :: নীতিবোধ মূল্যবোধ কাকে বলে? সেই বিষয়েও ঘনঘন হস্তক্ষেপ করছেন রাজনৈতিক নেতারা। রাজনৈতিক শব্দটির ব্যাপক মাত্রা আছে।

ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে নেতারা রাজনীতি করছেন তাদের রাজনৈতিক নেতা না বলে রাজনীতির লোক, এই বিশেষণে বিশেষিত করা উচিত বলে আমার মনে হয়। কারণ রাজনৈতিক এবং নেতা দুটি শব্দের অন্য মাত্রা,অন্য ব্যঞ্জনা, অন্য তাৎপর্য রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এইযে দলীয় মাতব্বরেরা তারা কোনমতেই রাজনৈতিক নয় এবং নেতা নন। তবুও যেহেতু শব্দটি বহুল প্রচলিত তাই রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই আলোচনা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতারা মাঝে মাঝেই জনসভায়,প্রেসমিটে প্রচ্ছন্ন,কখনো বা প্রকট হুমকি এবং শাসানি দিয়ে থাকেন। সাংবাদিকরা নাকি যথার্থ সংবাদ পরিবেশন করে না।মানে তারা তার দলের পক্ষে বলে না। তাদের নাকি দালালি করে, নীতিবোধ, মূল্যবোধ নেই। একথা বলছেন রাজনৈতিক নেতারা।

যে রাজনৈতিক নেতারা বছর বছর দলবদল করছেন, নিজের আদর্শ,দলীয় নীতি বর্জন করে পাল্টিবাজি করছেন,তাদের মুখে কি এ কথা শোভা পায়! তাদের মধ্যে কি নিজস্ব মূল্যবোধ আছে? তারা তার পারিবারিক উত্তরপুরুষ এবং তার পারিবারিক প্রজন্মকে কি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন? তারা যখন সরকার স্বীকৃত নেতায় পরিণত হচ্ছেন তখন তারা ৫ বছরেই স্থায়ী অস্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ২০০-২৫০ গুণ বেড়ে যাচ্ছে। কোন মূল্যবোধের রাজনীতি থেকে এটা হচ্ছে? তারা কোন ন্যায় নীতি মানছেন? এটা বলবে কে? আবার তারা বড় বড় বাক্যি ঝাড়ছেন। সাংবাদিকরা কেউ দালাল নয়, কোন কোন মিডিয়া দালালি করছে না এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে রাজনৈতিক নেতারা এসব বলছেন সেই রাজনৈতিক দলই তো বিভিন্ন মিডিয়াকে কিনে নিয়েছে। বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং অন্যরকম ভাবে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিয়ে। সেইসব সংবাদ মিডিয়ার তো মূল্যবোধ থাকবে না, নীতিবোধ থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।

সব সংবাদপত্র মিডিয়াকে কি একই ধাঁচে ফেলতে হবে? সাংবাদিকদের মূল্যবোধ, নীতিবোধের যে প্রসঙ্গ, যে বিষয়ে তা কি রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে শিখতে হবে? সরকারি ক্ষমতায় বা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে, পেশীশক্তির জোরে তারা নীতিবোধের কথা অনেক বলতে পারেন। অনেক সাংবাদিকই তা নীরবে নিঃশব্দে শুনতে পারেন। সবাই শুনবে কেন?

ধাতু তো অনেকই আছে, সংকর ধাতুও তো আছে। সব সাংবাদিক তো একই ধাতুতে তৈরী নয়। রাজনৈতিক নেতারা দ্বিচারিতা করবেন,মিথ্যা কথা বলবেন, আবার বাজি করবেন, পরোক্ষভাবে কামাইবাজি করলেও জনসাধারণের কাছে সেটা প্রত্যক্ষ,তবুও তারা সাংবাদিকদের নীতিবোধের কথা শেখাবেন।‌ শাসকশ্রেণীর আশ্রয় পুষ্ট হলে রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে পরে অঞ্চলে অঞ্চলে সোজা বাংলায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডেও যে কামাই বাজি চলে সেটা কোন নীতিবোধের?

রাজনৈতিক দলের নেতারা যে সরকারি পিডব্লিউডির জমিতে নিজেদের কার্যালয় তৈরি করছেন এটা কোন বোধের পরিচয়? এবং সেই জায়গায় এই বেকারত্বের যুগে হকারদেরও বসিয়ে দিয়ে তাদের থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা তুলছেন, এটা কোন নীতিবোধের পরিচয়?

সাংবাদিকরা তো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সংবাদ করেন। নেতাদের ঝুঁকি আছে? ঝুঁকি তো নেই। ছোট বড় মেজ ন’সব নেতাদেরই পেশী শক্তির বাহিনী আছে। আর নেতা হলে তো কথাই নেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিরাপত্তা বাহিনী পাচ্ছেন। তাদের মুখে এত বড় বড় নীতিবোধের কথা শোভা পায় না।

কোনদিন কোন শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা তাদের অভাব অভিযোগ জানার জন্য কোন মিটিং মিছিল করেছেন? রাস্তায় নেমেছেন? অথচ সাংবাদিকরা নিহত হয়েছেন ভুরি ভুরি। সাংবাদিকরা ব্যাপকহারে ধোলাই খেয়েছেন এই রাজনৈতিক মস্তান বাহিনীর হাতে। তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের কি এসব করতে হয়?

কজন রাজনৈতিক নেতা ভারতবর্ষের এই সময়ে এই পরিস্থিতিতে গুলি খেয়ে মরেছেন? আর কতজন যথার্থ বুদ্ধিজীবী সংবাদকর্মী গুলি খেয়ে মরেছেন? তার হিসাব রাজনৈতিক নেতাদের জানা আছে কি? সুতরাং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা,শাসকশ্রেণীর ক্ষমতা, বাহুবলের ক্ষমতা, লুম্পেনদের সমাবেশ ঘটিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির না করে,হে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ! বাড়িতে নিজে আয়নার সামনে দাঁড়ান। তার পাশে নিজের প্রজন্মকে রাখুন। তার মাথায় হাত দিয়ে বলুন আমি পৃথিবীর এক নম্বর মূল্যবোধ যুক্ত নেতা। তুমি আমাকে অনুসরণ করো।

আপনি যদি ৫৬ ইঞ্চি বুকের নেতা হয়ে থাকেন, বুকের ভেতর যদি আপনার হৃদয় থাকে আপনি আপনার নিজের সন্তানের মাথা স্পর্শ করে এই কথাটি একবার আমাদের জানান।

ঠিক কে আছেন এই শপথ নিতে প্রস্তুত, কোন রাজনৈতিক নেতা আছেন জানান। আমরা আপনার কাছে অবনত মস্তকে দাঁড়াবো, আপনার নাম আমরা প্রচার দেব।