নীল শব্দটির বিস্তৃত ব্যঞ্জনা আমাকে শিখিয়েছিল দুজন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জীবনানন্দ দাশ।
আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন।
নীলগঞ্জের পথে হাঁটিতেছি
তমাল সাহা
যে শব্দগুলি লেখা ছিল বইয়ের পাতায়
যে শব্দগুলি শুধু উচ্চারণ করেছি, দেখিনি কোনোদিন, আমি জানি দেখতে জানলে সেই শব্দগুলিও দেখা যায়।
শব্দসমূহ খুঁজে পেতে আমি বেরিয়ে পড়ি।
বেড়াতে যাব বলে আঠারো প্যাকেটের কার্গো প্যান্ট ও আট পকেটের জামাটি পরে ফেলি।
পর্যটনে পকেটগুলি সংগ্রহশালার কাজ করে।
আমি জানি প্রকৃতিতে সব আছে।
জীবনানন্দ প্রকৃতিতে খুঁজে পেয়েছিল যাবতীয় শব্দ স্বর,
বিভূতিভূষণ যদি না পেত গুলঞ্চলতা শকুনের ডিম তাহলে কি করে লিখতো পথের পাঁচালী?
নীল আকাশ, সমুদ্র নীল, নীলুদের তালগাছ, নীলকুঠি নীলকন্ঠ পাখি….
নীল শব্দটি আমাকে তাড়িত করে!
পর্যটনে আমি চলে যাই সেই বারাসাতের নীলগঞ্জ গ্রামের ভিতরে।
প্রথমেই আমি ছিন্ন শব্দটি খুঁজে পাই। পরে ছিন্নভিন্ন শব্দটি গাঢ়তর হয়ে ওঠে।
শব্দ কোনোদিনও হাতে তুলে নেওয়া যায় না, কে বলে?
আমি একটি ছিন্ন আঙুল কুড়িয়ে নিয়ে আমার জামার পকেটে রেখে দিই। তারপর নজরেৎপরে ছিন্নভিন্ন, মাংসের দলা। চোখ প্রসারিত করে দেখতে পাই টুকরো হাত পা দূরে দূরে ছড়িয়ে আছে। কয়েকটি খণ্ড বিখণ্ড অংশ তুলে পকেট ভর্তি করতে থাকি।
সিআইডি,এনআইএ, ফরেনসিক, জেসিবি মেশিন অ্যাম্বুলেন্স শব্দগুলিওও খুঁজে পাই। শব্দগুলির আয়তনের কোন পকেট আমার কারগো জামা বা প্যান্টে নেই!
আমার কাছে রয়েছে ছাব্বিশটি পকেট।
পৃথিবীর সব নিহতদের জমা রাখতে চাই আমি আমার স্পর্শের কোঠায়।
লাশ সংগ্রহ যে আমার বড় নেশা!
কোন খণ্ডটি কোন পকেটে রাখলে যথাযথ হবে বুঝতে পারিনা।
ঝলসানো শব্দের বদলে ঝলসানো দেহ খুঁজে পাই। এটি তবে কোন পকেটে রাখি?
এবার পাই ধড় শব্দটি। বোধ করি একেই বলে কবন্ধ শরীর।
কিন্তু এতো বড় শরীর কিভাবে কোন পকেট রাখবো আমি?
আরো একটু হেঁটে গিয়ে পাই একটি ছিন্নমুণ্ড। আমি হতাশ হয়ে পড়ি।
ব্যর্থ পর্যটক আমি, বসে পড়ি নিস্কন্ধ শিরটির কাছে, হাতে তুলে নিয়ে দেখতে থাকি তার মুখ।
নীলগঞ্জের মাঠে আমি হাঁটিতেছি প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়ে….