বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর,২৫ মে,২০২২ :: সারা বীজপুর জুড়ে এখন আইপিএল বেটিং চক্রের তাণ্ডব, তিনপাত্তি অনলাইন জুয়া তাণ্ডব অব্যাহত। সাট্টাকেও হার মানিয়ে এখন যত্রতত্র ঘরে-ঘরে আইপিএল বেটিং চলছে রমরমিয়ে তার পাশাপাশি চলছে তিনপাত্তি অনলাইনে জুয়া।এই অনলাইন চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে এই চক্রের শিকার এখন শিক্ষিত ছাত্র,যুবক যুবতীরা বেশি। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে বাড়ি, স্কুল, কলেজ, টিউশানে বসেই জুয়া খেলছেন।
এই জুয়াতে জেতার জন্য তারা ঘরবাড়ি সোনা গহনা সব কিছুই বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে আবার ধারেও ব্যাটিং ও জুয়া খেলছেন ও পরের টাকা আদায় করার জন্য এই জুয়া মাফিয়ারা তাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে।
জানা গেছে, আইপিএল বেটিং চক্র ও অনলাইন তিনপাত্তি জুয়া মাফিয়ারা বাকিতে টাকা ধার দিয়ে জুয়া বা বেটিং করাচ্ছে যুবক-যুবতী ও ছাত্রদের। আর তাদের দাপটে পড়ে সোনা গয়না বিক্রি করে দিয়ে সর্বশান্ত হতে হচ্ছে তাদের। জুয়ার নেশাগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রী সন্তানের বকেয়া টাকার জন্য বাবা-মা কেউ হেনস্থা করতে পিছুপা হচ্ছে না এই চক্রের মাফিয়ারা । বেশ কয়েকজন মানুষ ছেলেমেয়েদের বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য তারা নিজের ঘর বাড়ি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন।
এই মাফিয়া চক্রের ভয়ে বাবা-মারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বীজপুরে । পুলিশ কাছেও তারা যেতে ভয় পাচ্ছেন কারণ এই মাফিয়াচক্রের সঙ্গে পুলিশের দিনরাত ওঠাবসা ছবি দেখে ভয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছেন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
শুধু তাই নয় বেটিং মাফিয়াদের সঙ্গে এলাকার নেতাদের গভীর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। বীজপুরে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দানছত্র খাইরাতি সবটাই সামলাচ্ছেন এই বেটিং মাফিয়ারাই।
খবর এমনও পাওয়া গেছে যে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এই বেটিং মাফিয়াদের সৌজন্যে নির্বাচনে টিকিট পেয়েছেন ও জয়ী হয়েছেন । তারা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত নির্বাচনী প্রচারের খরচ বহন করে তাকে জয়ী করে তুলেছেন । তাই সেসব এলাকায় কাউন্সিলরদের বদলে শেষ কথা এই ব্যাটিং মাফিয়ারাই বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল এক নেতা জানান, আইপিএল মাফিয়ারা বেটিং মাফিয়ারা শুধুই যে টাকা লাভ করছেন বললে চলবে না, কারণ দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মোট খরচ হয় সেটা এরাই বহন করছেন। সামাজিক কাজে এরা টাকা খরচ করে লাইমলাইটে থাকছে নেতাদের পাশাপাশি ছবি তুলছে তাই ভয়ে মুখ খুলবে কে।
এই চক্রের শেকড় ছড়িয়ে রয়েছে গভীরভাবে। আইপিএল বেটিংয়ের জন্য ইতিমধ্যে সল্টলেক থেকে ধরা হয়েছে 13 জনকে। এই চক্র সমগ্র জেলায়-জেলায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যারাকপুরে জুড়েই তাদের তান্ডব চলছে। বিশেষ করে বীজপুরে এদের হই হই কান্ড।
গত মাসেই 5 লক্ষ টাকা একজনকে জুয়া খেলিয়ে, টাকা-পয়সার মেটাতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন একজন এজেন্ট। আইপিএল বেটিং এ 50 লক্ষেরও বেশি টাকা হেরে গিয়ে প্রায় পাগলের মতন চিৎকার শুরু করেন এক ব্যবসায়ীর ছেলে। টানা চার পাঁচ দিন রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেনি সেই ব্যবসায়ী ছেলে। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়।
ছেলের জুয়ার টাকা ব্যবসায়ী বাবা মেটানোর দায়িত্ব নেন।
জানা গেছে এক প্রাক্তন কাউন্সিলর এর ভাইপো জুয়া তে 50 থেকে 60 লক্ষ টাকা হেরে যান, পরে আইপিএল বেটিংয়ের মাফিয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে কুড়ি লক্ষ টাকায় রফা হয়। ছেলের বাবা তার ফ্ল্যাট বিক্রি করে এই টাকা মেটান। তার মান সম্মান রক্ষার জন্য মুখ খুলতে চাননি এই প্রাক্তন কাউন্সিলর।
আরও জানা গেছে 7 লক্ষ টাকা আইপিএল বেটিং এ যেতে এক যুবতী কিন্তু টাকা মেটাতে 5–7 দিন সময় চেয়ে নেয় মাফিয়ারা। যুবতী আরো টাকা জেতার লোভে এই চক্রের ফাঁদে পড়ে 12 লক্ষ টাকা হেরে যান। তার জেতা সাত লক্ষ টাকা হেরে তিনি বাকি পাঁচ লক্ষ টাকা মাফিয়াদের কাছে মেটানোর ভয়ে কাঁচরাপাড়া ছেড়ে নৈহাটিতে আত্মগোপন করে থাকেন। তবে আত্মগোপন করেও মাফিয়াদের হাত থেকে রেহাই পাননি। অবশেষে যুবতীর স্বামী জুয়ার বকেয়া টাকা তার বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেহাই পান।
এই বেটিং চক্রের কাছে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন করা হয় , কেন পুলিশের অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে না ? এই প্রশ্নের উত্তরে ভুক্তভোগীদের দাবি কোন পুলিশের কাছে যাবো ? ব্যাটিং মাফিয়াদের কারোবার তো এই পুলিশের সহযোগিতায় চলছে। তারা বিভিন্ন মঞ্চে নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলাচ্ছেন তাছাড়া পুলিশকে এরাই মঞ্চে সম্বর্ধনা দিচ্ছে তাহলে কার কাছে গিয়ে বিচার পাওয়া যাবে ?
বীজপুরে আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যাবে বড়দা থেকে ছোড়দা সকলের বখরা সময় মত পৌঁছে দেয় এই বেটিং মাফিয়া। বাদ নেই পুলিশও। তাই এসব দেখে কোন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে বা নেতাদের কাছে যাওয়া সাহস করতে পারছেন না। আর এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে বীজপুরে রমরমিয়ে চলছে আইপিএল বেটিং মাফিয়া ও তিন পাত্তি অনলাইন জুয়ার অবৈধ কারবার। যার কবলে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন ছাত্র-যুবক থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলে। ক্রমশঃ ……