রবীন্দ্রনাথ ! আমাদের রবীন্দ্রনাথ। পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ– গ্রীষ্ম ও বর্ষা আমাদের খুব নিজের, তোমাকে কাছে এনে দেয়

ন হন্যতে
তমাল সাহা

খরতপ্ত রৌদ্রতেজে কালবৈশাখী গায়ে মেখে নেয় আকাশ।
তুমি পা ফেলে মাটিতে হাঁটতে থাকো
কাছে দাঁড়িয়ে জোড়াসাঁকো, দূরে প্রতীক্ষায় শান্তিনিকেতনী বাতাস।

বাউল হবে বুঝি, হবে বুঝি সুফি ফকির অথবা কবিয়াল।
আলখাল্লা তুলে নাও গায়ে, কলমে বাজে একতারা
নগরে যুদ্ধ মড়ক মন্বন্তর সবকিছু দাও সামাল।

পা পড়েছে সর্বত্র, দীর্ঘ হাত রেখেছো সবখানে।
প্রশ্ন করেছে ফরিয়াদি মানুষ, তাকিয়েছে তোমার দিকে
অন্ধ তমসায় দিশেহারা জীবন, উত্তর খুঁজেছে তোমার অভিধানে।

কলমে অক্ষর বসিয়ে শব্দ সাজালেই হয় না সবকিছু।
লিখন ঐশ্বর্য হলেও তুমি একথা জানো
হাতেকলমে আশ্রমঋষি, পড়েছিলে তাই মানুষের পিছু।

কৃষ্ণচূড়ার দিন, মান্দার পলাশের দিন চলে যায়।
পৌষমেলা বসন্তের হোলি ফেলে রেখে যাও
যাত্রাপথে তোমার শিরে
বৃষ্টিস্নান ঝরে শ্রাবণধারায়।

পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ তো ছিলই কাছে।
ঈশান বায়ু অগ্নি নৈর্ঋত সবদিক থেকে বাতাসেরা ছুটে আসে
ফুলেল গন্ধ নিয়ে রাজবেশে তুমি গিয়ে দাঁড়াও মহারাজার পাশে।

রজনীগন্ধার শোক, চাঁপা ফুলের বিষাদ, বেলফুলের সমর্পণ।
এত মানুষ ছিল কোথায়? এত মানুষ থাকে কোথায়
শান্ত সমাহিত তোমাকে সাজিয়ে তোলে শ্বেত চন্দন।

চলে যাও বাতাস কাঁদে আর কে কে কাঁদে এখানে ওখানে?
সেসব বিস্তীর্ণ ছড়ানো সাজানো মানুষের ঘরে ঘরে
গীতাঞ্জলি অশ্রুজল হয়ে বাজে প্রেম ও পূজার গানে।

কাঁদে বৌদ্ধিক জ্যোৎস্না শোকাহত নক্ষত্রেরা নিষ্প্রদীপ আকাশের গায়।
নিমতলা দাহঘাটে পাবক শিখাও লেলিহান হতে হতে ম্রিয়মাণ
জলস্রোত ধীর, পারে রেখে খেয়াখানি কে চলে যায়!