আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর নিউজ ব্যুরো :: ২৩শে,নভেম্বর :: মুম্বাই :: রাতারাতি বদলে গেল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। পাশার দান উল্টে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের জন্য শপথ নিলেন বিজেপির নেতা দেবেন্দ্র ফাডনবিশ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন এনসিপির নেতা শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার । গতকাল শুক্রবার রাত ও আজ শনিবারের সকাল শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা ভারতের রাজনীতিতে মহাবিস্ময় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।
একক গরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপি পায় ১০৫ আসন, তাদের জোট সঙ্গী শিবসেনা পায় ৫৬টি। এনসিপি ও কংগ্রেস জোট পায় যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৪টি আসন। ছোট আঞ্চলিক দল ও স্বতন্ত্রদের দখলে থাকে ২৯টি। এই অবস্থায় বিজেপি-শিবসেনার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিবাদ বাধে। আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাওয়ার দাবিতে অনড় শিবসেনা জোট ত্যাগ করে এনসিপি ও কংগ্রেসের কাছাকাছি আসতে থাকে। অচলাবস্থায় জারি করা হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। দীর্ঘ এক মাসের টালবাহানা শেষ হওয়ার মুখে পৌঁছায় গতকাল রাতে, শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের বৈঠকে।
সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার জানান, উদ্ধব ঠাকরেই হবেন সর্বসম্মত মুখ্যমন্ত্রী। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত জানান, পাঁচ বছরের জন্যই মুখ্যমন্ত্রী হবেন উদ্ধব। বৈঠক শেষে সবাই জানান, শনিবার সব অমীমাংসিত প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। তিন দল সরকার গঠনের দাবি জানাবে।
গতকাল রাত ও শনিবার ভোরের মধ্যে পাশার দান উল্টে যায়। ভোর পাঁচটায় আচমকাই রাষ্ট্রপতির শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সকাল আটটায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন দেবেন্দ্র ফাডনবিশ ও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অজিত পাওয়ার।
অনেক প্রশ্ন এই অবসরে ঘুরপাক খাচ্ছে যেগুলোর স্পষ্ট উত্তর এখনো অজানা। যেমন এনসিপি কি দলগতভাবে বিজেপিকে সরকার গড়তে সাহায্য করল? নাকি পাওয়ার-পরিবারে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী? প্রশ্নটা উঠছে এই কারণে যে, পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই শারদ পাওয়ার টুইট করে জানান, বিজেপিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত অজিত পাওয়ারের ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে এনসিপি দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
শারদ পাওয়ার এই দাবি করলেও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ভিন্ন ধারণার জন্ম দিচ্ছে। যেমন মাত্র কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে যান শারদ পাওয়ার। বলা হয়, রাজ্যের কৃষক সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই তাঁরা গিয়েছিলেন। সেই বৈঠকে অজিত পাওয়ার ও প্রফুল্ল প্যাটেলও ছিলেন। ওই সময়েই প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণের সময় অনুশাসিত দল হিসেবে এনসিপি ও বিজু জনতা দলের প্রশংসা করেন। শারদ-মোদির বৈঠকের পরেই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী শিবসেনার সরকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ধারণা হয়েছিল, ওই সমর্থন না দিলে এনসিপি জোট ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে। ঠিক ওই সময়েই রাজধানীতে চালু হয়ে যায়, শারদ পাওয়ারের নাম পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিজেপির বিবেচনায় রয়েছে। আজকের মহা-অভ্যুত্থানের পর এখন যে প্রশ্নটি মহাবিস্ময় হয়ে ঝুলে রয়েছে, তা ওই শারদ পাওয়ারকে ঘিরেই। তা হলে কি এই অভ্যুত্থানের পেছনে শারদ পাওয়ারের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল? নাকি তাঁর অজান্তে ঘটে গেছে এই ঘটনা?
অনেক প্রশ্ন, ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির বাতাসে । কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক না ডেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হলো? কেন চুপিসারে লুকিয়ে শপথ গ্রহণ করানো হলো ?
প্রশ্ন উঠছে সরকারি ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ নিয়েও। নির্বাচনের সময় শারদ পাওয়ার ও অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগে আনে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তদন্তের জন্য পাওয়ারকে সমনও জারি করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, এ ক্ষেত্রেও কি তা হলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ভয় দেখানো হয়েছে।
দেবেন্দ্র ফাডনবিশকে চলতি মাসের শেষে বিধানসভায় গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। অর্থাৎ, পুরো এক সপ্তাহ সময় সরকার পক্ষের রয়েছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, এনসিপির মতো শিবসেনাতেও ভাঙন আসতে চলেছে। গরিষ্ঠতার প্রমাণে বিজেপি মরিয়া হবেই।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দেবেন্দ্র ফাডনবিশ বলেন, এক মাস ধরে অচলাবস্থা চলছে। রাজ্যের স্বার্থেই সম্ভাব্য খিচুড়ি সরকারের জায়গায় স্থায়ী সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত দল নিয়েছে। অজিত পাওয়ারের কাছে এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
মহারাষ্ট্রে মহা-অভ্যুত্থানের পর এখন প্রথম প্রশ্ন, কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে এনসিপি অবশেষে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দেয় কি না। যোগ দিলে প্রফুল্ল প্যাটেল ও পাওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবেন।
তবে কি বলতে হবে বর্তমান ভারতে রাজনীতির ব্রম্ভাস্ত্র হয়ে উঠতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গুলির ভূমিকা ?