অবতক খবর,২৭ মার্চ: রামপুরহাটে বালি খাদান, কয়লা খাদানের গল্প আমরা শুনি। বখরার কারণে সেখানে খুন এবং জতুগৃহ দাহ হয়েছে। তাতে মৃতের সংখ্যা সঠিক কত তা জানা যায়নি। কেউ বলছেন,৮,কেউ বলছেন ৯,কেউ বলছেন ১০,কেউ বলছেন ১২। মৃতদেহ গুলির নামও প্রকাশ করা হয়নি। নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে খুন হয়েছে, আগুনে দগ্ধ হয়েছে। এককথায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ‌এরা সকলেই তথাকথিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এখন মানুষ বলে আর কোন পরিচয় নেই এখন তার পরিচয় সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু?

বর্তমানে বীজপুর অঞ্চলেও তৃণমূলে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে তার মূলে কামাইবাজি। গতকাল অর্থাৎ ২৭ মার্চ এক বহু আলোচিত তৃণমূল কর্মী তাকে নাকি রিভলবারের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার জামা কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন,যে যে নাম উঠে আসছে তারা তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তিনি অভিযোগে বলেছেন এর সঙ্গে যুক্ত বাবুয়া,লোহা, ভোল্টেজ নামে কয়েকজন ব্যক্তি। যাই হোক,এই ঘটনায় আক্রান্ত সেই বহুশ্রুত কর্মী খোকন বণিক। তিনি তৃণমূল কর্মী এবং তার স্ত্রী বেবি বণিক এই নিয়ে তিনবারের কাউন্সিলর ২১ নং ওয়ার্ডের।

একসময়ে খোকন বণিকের দৌরাত্ম্য ছিল ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। ২১ নং ওয়ার্ডটি একটি কামাই ক্ষেত্র।সেখানে পুকুর ভরাট করে জমি বন্টন,বাড়ি নির্মাণ চলছে। রেল অধ্যুষিত জায়গার দখলদারি, তার থেকে কামাইবাজি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। এলাকাটি লক্ষ লক্ষ টাকার কামাই ক্ষেত্র। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে খোকন বণিক বিজেপি অন্তর্ভুক্ত হতে চান এবং সে সময়ে বিশেষ কারণে তিনি ৬ নং ওয়ার্ডে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন। তার উপর চড়চাপড় চলে। সেই সময়ে তিনি রাজনৈতিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েন। ফলত, ২১ নং ওয়ার্ডে তার কর্তৃত্ব অন্য গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়।

অর্থাৎ তার বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। ‌তারা সেখানে নিজেদের কামাই ক্ষেত্র তৈরি করেন। এরই মধ্যে সেখানে ৭০ লক্ষ টাকার একটি বখরাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। জমি বন্টনের জন্য যে ৭০ লক্ষ টাকা তোলাবাজি হবে, তার মধ্যে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা যারা দখলদারি নেবেন তাদের মধ্যে থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, সূত্রে জানা গেছে।

পরবর্তীকালে বিশেষ করে এই পৌরসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক স্থিরতা সম্পর্কে খোকন বণিক একটু সাহস পান। তাঁর স্ত্রী এবারও তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে ২১ নং ওয়ার্ডে টিকিট পান এবং বিজয়ী হন। ফলত, তিনি পুনরায় ক্ষমতা কায়েম করতে চাইছেন বলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর অভিমত। কারণ ২১ নং ওয়ার্ডে তার স্ত্রী জয়ী হয়েছেন। গতকাল যে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে,যে ক্ষেত্রে বিধায়ক সুবোধ অধিকারী বলেছেন,আইন আইনের পথে চলবে। কোনরকম কামাই বাজি পুকুর ভরাট চলবে না। সেখানে জানা গেছে,এই শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, এই বখরাবাজি এর পেছনে রয়েছে।

শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় পরবর্তিতে গতকাল রাতেই ২১ নং ওয়ার্ডের একটি জলাশয়ে যেখানে মাছ চাষ করা হয় সেখানে বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলা হয়। আজ সকালে মরা মাছ পুকুরে ভেসে ওঠে। ‌এই বিষয়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে যে এই ঘটনার সঙ্গে খোকন বণিক জড়িত। ফলত,এই অঞ্চলেও যে কামাইবাজি নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। এখন তো আর রাজনীতি নেই। এখন হয়েছে রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ডের আড়ালে কামাইবাজির কর্মকান্ড। এখানে আর সেইভাবে স্বচ্ছ রাজনৈতিক কর্মী নেই। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আদর্শ কোন দিকে যাচ্ছে এটা তার প্রমাণ।