পুলিশ, জাতির নিরাপত্তা রক্ষক। পুলিশ কত ভালো কাজ করে। পুলিশ আবার সাধারণ মানুষের ডায়েরিও নেয়না, এমন অভিযোগ। পুলিশ বলে, সাংবাদিকরা থানায় ঢুকবে কেন? পুলিশ সম্বন্ধে আমি কি জানি শুনুন।
পুলিশ সম্বন্ধে আমি যা জানি
তমাল সাহা
শরৎ চাটুজ্জ্যে মশাই আমাকে
শ্রীনাথ বহুরূপীকে চিনিয়েছিলেন।
সেই থেকে আমি শ্রীনাথের প্রেমে পড়ে যাই।
বহুরূপী একটি পেশা।
জীবন জীবিকার সঙ্গে এই পেশা জড়িত তখন থেকে আমি তা জানতে পারি।
দুটো পয়সা উপার্জনের জন্য
তাকে রামকমল ভট্টাচার্যের খড়ম-পেটাই খেতে হয়েছিল,
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের লেজ
কেটে নিয়ে তাকে রীতিমতো অপমান করা হয়েছিল।
জীবন ও সংগ্ৰাম—
জীবন সংগ্ৰাম খুঁজে পেয়েছিলাম আমি
শ্রীনাথের জীবনে।
তাই ‘ইওর এইম ইন লাইফ’ প্রবন্ধে লিখেছিলাম,
আমি বড় হয়ে বহুরূপী হতে চাই।
শরৎ বাবুকে আমি হারিয়ে দিয়েছি।
তিনি শ্রীনাথকে বহুরূপী দেখেছিলেন।
আমি পুলিশকে বহুরূপী দেখেছি।
শরৎ চাটুজ্জ্যের মতো ভবঘুরে মানুষও সারাজীবনে
এতো বহুরূপ দেখতে পাননি।
পুলিশ অর্পণ ও প্রণাম নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুলেছে।
বৃদ্ধদের, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবে পুলিশ, এমনই তার শপথ।
সম্প্রীতি ফুটবল ‘জলতরঙ্গ কাপ’ চালু করেছে পুলিশ।
ডেঙ্গু সতর্কতা অভিযান করছে পুলিশ।
আবার প্রতি থানায় ডাকবাবুও বহাল রেখেছে পুলিশ।
পুলিশ, এর চেয়ে কল্যাণকর
আর কী করতে পারে?
হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে তোলা তুলছে পুলিশ।
এমন প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে।
পার্টি নেতা ও মস্তানদের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ, এমন ফটো রয়েছে আমার কাছে।
পুলিশ সুপারের মতো ব্যক্তিত্ব রক্তদান শিবিরে রক্তদান করছেন,
সেই আলোকচিত্রও রয়েছে আমার কাছে।
অন্যদিকে থানা থেকে তার হিস্যা পৌঁছে যাচ্ছে,এ কে না জানে!
পুলিশের চোখকে দূরবীক্ষণ ও অণুবীক্ষণ যন্ত্র হিসেবে উদাহরণ দেওয়া যায়।
আবার পুলিশকে অনেকে জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র বলেন।
দূরবীক্ষক পুলিশ সুদূরে কোথায় কি চলছে,
তা থেকে কত হিস্যা পাওয়া যাবে তা জানে।
অণুবীক্ষক পুলিশ ছোট কান্ডকে
বড় করে দেখিয়ে কিভাবে কামাইয়ের রাস্তা বানাতে হয় তা জানে।
জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র পুলিশ রাজনৈতিক মস্তান পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও খানা তল্লাশি করে তাকে খুঁজে পায় না।
আবার এই পুলিশ আমাকে
বিপ্লব মারাচ্ছো,খানকির বাচ্চা! বলে
থানা গারদে ঢুকিয়ে দেয়।
এই পুলিশ স্বচ্ছদ্রষ্টা হয়ে প্রতিবাদী মিছিলে একের পর এক গুলি চালিয়ে উড়িয়ে দেয় মাথার খুলি।
এই পুলিশ আমার মা-কে
বলেছিল ‘খানকি’
আমার বাড়ির দরজা ভেঙে
ঢুকে যায় ঘরে
আমি কি করে তা ভুলি!
পুলিশ যত ভালো কাজই করুক,
মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পুলিশ মন্ত্রী হলেও
জেনে রাখা ভালো
রবীন্দ্রনাথ পুলিশকে ভয়ঙ্কর ভয় করতেন।
এ বিষয়ে আমি রবীন্দ্রনাথের তিনটি লেখা পড়েছি।
শেষ পর্যন্ত আমি স্বামীজির অনুকরণে
এই বলতে পারি
বহুরূপে সম্মুখে তোমার
ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর
চোখ খোলো,তাকিয়ে দেখো—
দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ অবিনশ্বর।