বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর, ১১ জুন :: গত সংখ্যায় আপনারা পড়েছেন যে ব্যারাকপুর লোকসভা্য সিট থেকে বিজেপির হয়ে নির্বাচন লড়ে জিতে সাংসদ হন অর্জুন সিং। কিন্তু জেতার পরেও ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন অর্জুন। গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না তিনি বিজেপিতেও। তাই তৃণমূলে ফেরার অফার পেয়ে তিনি সময় খরচ না করেই শীঘ্রই ফয়সালা করে নেন, ঠিক হয় তিনি ফিরছেন ফের তৃণমূলে।
তবে কেন অর্জুনের কাছে এই অফার দেওয়া হল?
হ্যাঁ,এখন ব্যারাকপুর সহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা কর্মীদের মনে একটাই প্রশ্ন,কেন অর্জুনের কাছে এই অফার দেওয়া হল। কেই বা তাকে এই অফার পাঠালেন? এর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এখনো পাননি হয়তো অনেকে। আপনাদের মনেও এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ রয়েছে তাই না!
আসলে এই মুহূর্তে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব হিসেবে যিনি উঠে এসে দলের রাস নিজের হাতে নিতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে দমদম-ব্যারাকপুর জেলা তৃণমূল এই মুহূর্তে নেতৃত্বের ক্রাইসিসে ভুগছে। জেলার দায়িত্বে রয়েছেন এই মুহূর্তে পার্থ ভৌমিক। তাঁর উপরে একেবারেই ভরসা করা যায় না। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে সামনে রেখে তার উপরে ভরসা করে লোকসভা নির্বাচন জয় করা প্রায় অসম্ভব।
এখন প্রশ্ন যে,পার্থ ভৌমিক যিনি জেলা সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তার অঙ্গুলিহেলনে এলাকার ৭ টি বিধায়কের মধ্যে ছয়জন বিধায়ক তার ভক্ত। তার নির্দেশ ছাড়া একপাও নড়াচড়া করেন না তারা। তার প্রভাব এতটাই যে তিনি হ্যাঁ বললে প্রত্যেকে তাই বলেন। তাছাড়া পার্থ বাবুর কোনো সিদ্ধান্তের একচুল বিরোধিতা করার সাহসও কারুর নেই। এককথায় বললে ৪ জন বিধায়কই পার্থ বাবুর অনুগত। যিনি এতটা প্রভাবশালী তাহলে তৃণমূলের ওপর মহল কেন পার্থ ভৌমিককে বিশ্বাস করতে পারছেন না? এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।
আসলে পার্থ ভৌমিকের এই গ্রহণ যোগ্যতা ও প্রভাব দেখে তার উপরে ভরসা করে গত লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংকে দু লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারানোর ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পার্থ বাবু যে-যে জায়গায় জয়ের হিসেব দিয়েছিলেন কোনোটাই অঙ্কে মেলেনি। শুধু তাই নয়, তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে ভোটের দিনও জগদ্দল নিয়ে গিয়ে সোমনাথ শ্যামের অফিসে ২ থেকে ৩ ঘন্টা শুধু-শুধু বসিয়ে রাখা হয় ভুয়া জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তাকে বুথে-বুথে যেতে দেওয়া হয়নি। অন্য দিকে অর্জুন সেই সময়কে কাজে লাগান, ভোটের মার্জিন বাড়ানোর জন্য। পরের দিকে এই কথা বলে অভিযোগ জানান দীনেশ ত্রিবেদী নিজেও।
শুধু তাই নয় গত ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা পার্থবাবু সাজিয়ে দিয়েছিলেন সেটাও শেষ পর্যন্ত বদল করে দিতে বাধ্য হয়েছিল ওপর নেতৃত্ব। তাছাড়া ভাটপাড়ার প্রায় সমস্ত কাউন্সিলরদের অর্জুনের সঙ্গ ত্যাগ করিয়ে তৃণমূলে আনা হয়। অর্জুনের সিংয়ের ঘরের ভেতরে ভাঙ্গন ধরিয়েও ভাটপাড়ায় জয়ী হয়নি দল। ভাটপাড়া জয় নিয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে ভরসা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পবন সিংয়ের কোন জনপ্রিয়তা বা বিজেপির তেমন প্রচার না করে জয়ী হয় ও হেরে যায় তৃণমূল, এক অজানা কারণে। পরে জানা যায় যে, ভাটপাড়া থেকে যে জিতু সাউকে প্রার্থী করেছিল দল তার হয়ে নির্বাচনী ময়দানে নামেননি অনেক নেতা কাউন্সিলর। প্রার্থী অভিযোগ জানান তাদের বিরুদ্ধে,কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কারণ তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জেলা নেতৃত্ব। অর্থাৎ এবারেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিটে যার জোরে জয়ের ভরসা করেছিলেন কিন্তু ফল আশানুরূপ হয়নি।
প্রথমে লোকসভা পরে বিধানসভায় দু-দু বার ভরসা করেও সমস্ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেও হারানো যায়নি অর্জুনকে। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন যে, তৃণমূল জেলা নেতাদের মধ্যে অর্জুনকে হারানোর মতন ক্ষমতা আর নেই। প্রত্যেকবার অর্জুনের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে তাদের। দল বুঝতে পেরেছে যে একা অর্জুন সমস্ত জেলা নেতৃত্বকে খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বারে বারে পরাস্ত করেছেন। অন্যদিকে তারা সকলে মিলে ও পুলিশ প্রশাসনের ক্ষমতা ব্যবহার করেও অর্জুনের কেশাগ্র ছুটে পারেননি। তাই ২০২৪-এ নির্বাচনে জয়ী হতে গেলে অর্জুন একাই যথেষ্ট।
তাই দলের পক্ষে অর্জুনকে ফিরে আসার অফার পাঠানো হয়। আর অর্জুন ফের ক্ষমতায় ফিরতে এই অফার লুফে নেন। পরিকল্পনা করে অর্জুনকে দলে ফেরানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।আর বিজেপিকে চাপে ফেলার ছক তৈরি করে উচ্চ নেতৃত্ব। শেষে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখেই অর্জুনকে ফেরানো হয় তৃণমূলে।
তৃণমূলের প্রবীণ নেতা এবং সাংসদ সৌগত রায় এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন যে, অর্জুনকে ফেরালে কোন লাভ তিনি দেখছেন না। কিন্তু দলের নেতা বুঝতে পেরেছেন যে ২০২৪-এ নির্বাচনে রাজ্য পুলিশকে দিয়ে হবেনা, তবে মোদিকে শিক্ষা দিতে রাজ্যের প্রত্যেকটি লোকসভা সিট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।আর এই ব্যারাকপুর সিটের জন্য অর্জুন একান্তই জরুরী। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে, অর্জুনের কাট তৃণমূলের জেলা নেতাদের কাছে নেই।
তৃণমূলের পর্যালোচনা এই যে, অর্জুন সিং-এর কথায় আর কাজে কোনো ফারাক নেই, বরং তা ভরসা যোগ্য। তাই তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের থেকে বেশি ভরসা এখন অর্জুনকে করছে দল। তাই জেলা তৃণমূলের সকলের অনিচ্ছার পরেও অর্জুনকে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে উচ্চ নেতৃত্ব।
অর্জুন সিং দলে ফিরে এসেছেন। অনেকে মেনে নিয়েছেন, এখনো অনেকে মানতে পারেনি। তবে ধীরে ধীরে তিনি পুরানো ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন। তৃণমূলের একজন হেভি ওয়েট রাজ্য নেতার দাবি, অর্জুনের কাছে জেলার নেতারা এখনো অনেক বাচ্চা। অর্জুন নিজেই একটি ভোট মেশিন। তাই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে জেলার দায়িত্ব অর্জুনের হাতে দিতে আগ্রহী সর্বোচ্চ নেতৃত্ব……… বাকি পড়ুন তৃতীয় পর্বে