বিনয় ভরদ্বাজ , অবতক খবর :: তৃণমূলের প্রথা ভেঙে এই প্রথম রাজ্য কমিটি বা জেলা চেয়ারম্যানকে না জানিয়েই ব্লক সভাপতি বদল করলেন দমদম-ব্যারাকপুর জেলা তাপস রায়। তাপস বাবু ঋষি বঙ্কিম ব্যারাকপুর ব্লক-১ এর সভাপতি রাণা দাশগুপ্তর জায়গায় দায়িত্ব গ্ৰহণ করার জন্য চিঠি দিয়েছেন কাঁপা-চাকলা গ্ৰাম পঞ্চায়েত প্রধান রবি নিয়োগীকে। রবি বাবু তাঁর নতুন দায়িত্বের চিঠি পেয়ে আপ্লুত। তিনি অবতক-কে জানান,দল তাঁকে এই পদের জন্য যোগ্য বলে মনে করেছেন তাই তাঁকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কার জানান যে,সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের আশীর্বাদে তাঁকে যে দায়িত্ব জেলা সভাপতি দিয়েছেন তা তিনি ভালোভাবেই পালন করবেন এবং তাঁদের ভরসা বজায় রেখে দলকে আরো ভালোভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করবেন।
তবে দলের সাংগঠনিক পদে পদাধিকারিকদের নাম ঘোষণা এর আগে অন্য নিয়ম মেনে হতো। অর্থাৎ দলের অল ইন্ডিয়া তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজে রাজ্য, জেলা ,ব্লক,টাউন বা মহিলা এবং ছাত্র নেতৃত্বের পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হত। সেই চিঠি পুশ করা হতো এই দুটি পেজে। সাংগঠনিক সভাপতি, চেয়ারম্যান বা সাধারণ সম্পাদক সেই দায়িত্ব প্রাপককে সেই চিঠি পৌঁছে দিতেন। যেমন,কদিন আগেই রাজ্য তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী ও জেলা পাদাধিকারীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সব নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূলের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়,এর আগেও যে সকল পদাধিকারীদের পরিবর্তন করা বা সংযোজন করা হয়েছে তাদের এই নিয়মে নাম সমস্ত রাজ্যবাসীর কাছে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম একজন ব্লক সভাপতি পাল্টে দেওয়া হলো অথচ তা তৃণমূলের কোন অফিসিয়াল পেজে দেওয়া হলো না। এখানেই প্রশ্ন,তাহলে কি তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সম্মতি ছাড়াই কি এই দায়িত্ব বন্টন? নাকি এবার থেকে এই নতুন পথ অবলম্বন করেই চলবে তৃণমূল সংগঠন? অর্থাৎ যিনি জেলা সভাপতি হবেন তার নীচুতলার পদাধিকারীদের নাম তাঁর মতো করে ঘোষণা করতে পরবেন! যদিও তৃণমূলের উপর নেতৃত্ব বরাবরই জানিয়ে আসছেন, যা করবেন নেত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের নজরদারি ছাড়া কোনটি নাকি করা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রমী বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি আদেও জানেন না জেলা সভাপতি তাপস রায় ব্লক সভাপতিকে এই চিঠি দিয়েছেন কিনা! কারণ চিঠি দিলেই নিয়ম মেনে এটি অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ফেসবুক পেজে দেওয়া হতো। তবে নতুন ব্লক সভাপতি যেভাবে সকলের কাছ থেকে সংবর্ধনা গ্রহণ করছেন, মিডিয়াতে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা বলছেন,তাহলে তৃণমূল দল নতুন পথ অবলম্বন করেছে। আর যদি তাই হয় তাতে এটাই প্রমাণিত হবে যে,দলের নিচু তলার উপর রাজ্য নেতৃত্বের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা হয়েছে তা উপর থেকেই ঘোষিত হয়ে এসেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি এমন হয়ে থাকে তবে তা জানা নেই। কারণ অফিসিয়াল পেজে না দিলে কেউ জানবেই বা কি করে। এতদিন এটাই হয়ে এসেছে অর্থাৎ এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু কেউ যদি এখন আলাদা নিয়ম তৈরি করে সেটা তার ব্যাপার হতে পারে। এ ব্যাপারে সাংসদ আর বেশি মন্তব্য করলেন না।
তবে এই সমস্ত প্রশ্ন যখন ঋষি বঙ্কিম ব্লক ১ এর সভাপতি রাণা দাশগুপ্তকে করা হয়,তখন তিনি বলেন, তাঁকে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই সমস্ত তথ্য তিনি মিডিয়া মারফতই জানতে পারছেন। সেই চিঠিও মিডিয়াম মারফতেই তাঁর সামনে এসেছে। দল কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিভাবে নিয়েছে সে সম্পর্কে তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু অফিসিয়াল ভাবে তাঁকেও কিছু জানানো হয়নি। তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জাতে পারেননি। তিনি উপরে মহলে এনিয়ে যোগাযোগ করছেন। তাদের নির্দেশ ছাড়া তিনি কোন কিছুই মন্তব্য করবেন না।