অবতক খবর ১০ ফেব্রুয়ারিঃ ক্রমে ক্রমে ভারতবর্ষ ভগবানের দেশ হয়ে যায়। ভারতবর্ষে চারটি কুম্ভ তীর্থ রয়েছে– প্রয়াগ, উজ্জয়িনী, নাসিকে ত্র্যম্বকেশ্বর এবং হরিদ্বার। এবার পঞ্চম কুম্ভ তীর্থস্থান দখলের জন্য দৌড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। তিনটি নদী গঙ্গা যমুনা সরস্বতী সম্মিলিত হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাই হুগলি জেলার ত্রিবেণীকে বলা হয় মুক্তবেণী। আয়োজকরা জানাচ্ছেন ৭০৩ বছর আগে গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি স্নানের পর নাগা সাধু এবং ভারতবর্ষীয় অন্যান্য সন্তরা পদব্রজে ত্রিবেণীতে উপস্থিত হয়ে এখানে মহা জমায়েত করেছিলেন।

ত্রিবেণীর সপ্তর্ষি ঘাট যেহেতু ছোট তাকে কেন্দ্র করেই আরো বিস্তৃত পরিসরে গঙ্গার এপারে নদীয়া জেলার মাঝেরচর অঞ্চলে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ঘাটে কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোও আসরে নেমে পড়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রাজনৈতিক বিভিন্ন তোরণদ্বার তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতা নেত্রীদের ছবি, রয়েছে রাজ্য নেতা নেত্রীদের ছবিতে অঞ্চল ছেয়ে গিয়েছে। ফলত বোঝা যাচ্ছে না হিন্দুত্বের জাগরণের নামে এর ভেতর কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে কিনা। যেহেতু এই দেশের ক্ষমতায়ন যাকে স্থুল বাংলায় বলে ভোট যেখানে ধর্মকে পণ্য করা হয় তাই এখানে হিন্দুত্বের জাগরণ কোন লক্ষ্য কিনা আগামীতে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।

এখানে তো অমৃত কুম্ভ থেকে কোন অমৃত ছিটকে পড়েনি তবে এখানে কুম্ভমেলা হবে কেন? এর উত্তরে বিশেষ করে এক মহারাজ সাক্ষাতে বলেছেন, অমৃত কুম্ভ থেকে নিঃসৃত তরলই শুধু অমৃত হতে পারে না, এই দেশ ভগবানের দেশ ,নদীয়া জেলায় রয়েছেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব, কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় রয়েছেন সতীমা, এটি রামকৃষ্ণ পরমহংস বিবেকানন্দের দেশ তাদের তাদের মুখনিঃসৃত বাণীই অমৃত। তাতে গাঙ্গেয় উপত্যকা ভেসে গিয়েছে। তাই এখানে অমৃত কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সমাবেশ। রাজনৈতিক প্রচার তোরণদ্বার এবং রাজনৈতিক নেতাদের ছবি প্রচারে অংশ নিয়েছে, এই সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে যে কোন রাজনৈতিক দল আসতে পারে। এটি সর্বধর্ম সমন্বয়ের একটা প্রচেষ্টা।

১০ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে গৈরিকধ্বজ রোপন। সঙ্গে চলছে গীতা চন্ডী ভাগবত পাঠ, কৃষ্ণ নারায়ণের সম্প্রচার, সাধু ভান্ডারা।

১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার হবে সেই মহতী অনুষ্ঠান– অরণি মন্থন দ্বারা অগ্নিপ্রজ্বালন মহাযজ্ঞ– নাগা সন্ন্যাসী দ্বারা ১০৮ যজ্ঞকুণ্ড ধুনি, তপস্যা ও জাগরণ।

১২ ফেব্রুয়ারি রবিবার হবে ধর্মীয় আলোচনা। প্রতিদিনই গীতা পাঠ রয়েছে। প্রতিদিনই রয়েছে সন্ধ্যায় গঙ্গারতি।

১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত হবে সেই উল্লেখযোগ্য শাহিস্নান পর্ব। তার আগে শুরু হবে শোভাযাত্রা। নাগা সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে অন্যান্য সাধু সন্তরা থাকবেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি সাধুদের ভান্ডারা প্রদানএবং বিভিন্ন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কুম্ভ মেলার সমাপ্তি ঘোষনা করা হবে

রাজ্য প্রশাসনের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসা ব্যবস্থায সমস্ত দিকে নজর রাখা হয়েছে। স্পিড বোটে ঘুরছেন ডুবুরিরা।

উত্তরপ্রদেশের নিরঞ্জনী, জুনা, মহানির্বাণ, নির্বাণ আখড়া থেকে নাগা সন্ন্যাসীরা কুম্ভস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন, পৌঁছে গিয়েছেন অন্যান্য ধর্মের সাধুসন্তরা।

নদীয়া অর্জন করতে চলেছে পঞ্চম কুম্ভ তীর্থস্থান। অন্যান্য কুম্ভ মেলার সঙ্গে এর পার্থক্য প্রতিবছর মাঘী পূর্ণিমার দিন মাঘীসংক্রান্তিতে এই স্নান অনুষ্ঠিত হবে।

ভাতহীন ভারতবর্ষে পেটে খিদে নিয়ে চলবে পুণ্য কুম্ভস্নান। আচ্ছে দিনের দিকে এগোচ্ছে ভারতবর্ষ!