ভূতের ভবিষ্যৎ নয়, ভবিষ্যতের ভূত নয়, আমার চারিদিকে ঘুরিতেছে বর্তমানের ভূত।
বর্তমানের ভূত
তমাল সাহা
আমি বহু বছর হাঁটিতেছি পথ
এই উপকূলের লবণাক্ত হাওয়ায়…
আমি দেখি নাই ব্রহ্মদত্যি, শাঁকচুন্নি
তাহার মতো—
হিজল, জারুল, আঁশ শ্যাওড়ার ছায়ায়।
সুতানুটি নগরে ছিলাম আমি বহুদিন।
পোড়ো বাড়ির ভিতরে সে এক পূর্ণ
অশরীরী ভয়, ছায়া ছায়া ভৌতিক।
হয়তো বা খেলা করে
অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
প্রপিতামহের আত্মা পারলৌকিক।
এখন আমি নিরন্তর দেখিতেছি
ভূতের ভবিষ্যৎ অথবা ভবিষ্যতের ভূত নয়
দেখিতেছি বর্তমান ভূত রাইটার্সের অলিন্দে, নবান্নের বারান্দায়
ভাগীরথী তীরে, অথবা অ্যাকাডেমি চত্বরে, রাষ্ট্রীয় সাহিত্য সংস্কৃতির ঘরে।
তাহারা বিভূষিত শাসকের ভিক্ষা—
মুদ্রা ও মোহরে।
সেইসব ভূত বাম ছিল কোনদিন,
এখন কত তৃণভোজী ভূত
হেঁটে যায় সশব্দে প্রতিদিন।
ইহারা কেহই সেই চতুর্দশীর ভূত নয়।
ইহাদেরই আমি পাই বেশি ভয়।
এখানে এখন অমাবস্যার বারমাস্যা, চন্দ্রগ্রাস।
প্রতিবাদী ভূত আগেও ছিল
এখনও ঘাড়ে ঘন ঘন ফেলিতেছে নিঃশ্বাস।
গতকাল যে ভূত প্রতিবাদী ছিল
আজ সে নীরব।
গতকাল যে ভূত মৌন ছিল
আজ সে সরব।
চারিদিকে ভূত! ভূত! আর ভূত!
এখন দেখিতেছি ভূত সকল দলদাস ক্রমাগত হইতেছে ক্রীতদাস।
কখনো মাংসাশী
কখনো ভক্ষণ করিতেছে ঘাস।
শাসকের দালালি করা তাহাদিগের অভ্যাস।
বহুবিধ ভূতের কথা লিখিতেছি আমি—
কত সব ভূত!
দাড়িবান,দাড়িচাপা,কবিভূত,কাকভূত,
আঁকিয়ে ভূত, নাটুকে ভূত, গায়ক ভূত।
সরকারি সম্মান-বেতন লইয়া ফিরিতেছে ঘরে অদ্ভুত।
গো-ভূত দেখিতেছি ক্রমে ক্রমে বাড়িতেছে
পাড়ায় পাড়ায়,
স্বঘোষিত হিন্দু ভূত আমি দেখিয়াছি
হিজাব মাথায়।
এখন নাঁকী সুরে কোনো ভূত নাই
এখন সব ভূত নির্লজ্জ বেহায়া।
আমার চারিদিকে ছায়া নয়
ঘুরিতেছে তাহাদের কায়া।
আমি তো জানি
বর্তমান সব ভূতের আকার প্রকার।
ভূতের দলে আমিও পড়ি
আমি ভূত কিম্ভুত কিমাকার।
এইসব সেয়ানা ভূত
কখন কার পক্ষে যায়
আমি অন্ত্যজ অশিক্ষিত ভূত
বুঝিনা কিছুই বড় অসহায়!
বাংলার বহুবিধ ভূত
আমি দেখিয়াছি বারবার,
পৃথিবীর ভূত আমি খুঁজিতে যাই না আর…