বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, কোলকাতা :: পশ্চিমবঙ্গে যা হয় কোনটাই বেআইনি হয় না, সবটাই নাকি আইন মেনে। তাই রাজ্যের মানুষ থেকে শুরু করে সরকার বাহাদুর,পুলিশ প্রশাসন প্রত্যেকেই দাবি করে এই রাজ্যে আর যাই হোক, তবে আইনের শাসন আছে। কারণ এখানে যা কিছু হয় আইন মেনেই হয়।
যেমন ধরুন, দুর্গা পুজোর আগে কলকাতা হাইকোর্ট কোভিড-১৯ সংক্রমন যিতে আরও বিস্তারলাভ না করতে পারে সেকথা মাথায় রেখে পুজো মন্ডপে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। আদেশে বলা হয়েছিল মন্ডপ এরিয়ার ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে কোন মানুষই প্রবেশ করতে পারবেন না।প্রত্যেক পুজোমণ্ডপে লাগিয়ে রাখতে হবে কনটেইনমেন্ট জোন বোর্ড।লিখে রাখতে হবে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে কি হলো!! রাজ্যজুড়ে হইহই করে পুজো আয়োজিত হল আর মণ্ডপে মণ্ডপে হাইকোর্টের নির্দেশকে কোন পরোয়া না করে উপচে পড়ে ছিল হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন থেকে পুজো উদ্যোক্তাদেরকে মানতেই হবে। কারণ সকলে এক কথায় জানিয়ে দিয়েছেন “যা হয়েছে সবটাই আইন মেনে”।
বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে “যা হচ্ছে সবটাই আইন মেনে হচ্ছে”। এই প্রচার প্রত্যেকের কানে অবশ্যই কয়েকবার করে শুনিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা।কলকাতা হাইকোর্ট যাদেরকে এই পুজো মণ্ডপে তদারকি করার দায়িত্ব দিয়েছিল তারা মানুষের ভিড়ের ঠেলায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন। পড়ে তবে মাইকে অবশ্য তারাও প্রচার করেছেন যে “আইন মেনেই পুজো প্রতিমা দর্শন করুন”।
রাজ্যে ক্ষমতাধারী দল থেকে শুরু করে বিরোধী দল, প্রত্যেকে বিশাল বিশাল জনসভা, বিজয়া সম্মিলনী, বড় বড় মিছিল, প্রতিবাদ রেলি বা একদল থেকে অন্য দলে যোগদান কর্মসূচি, সবটাই করছেন। মানুষের ভিড়ে ঠাসা ঠাসি, তবে সব টাই নাকি আইন মেনে। এই রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর যারা প্রচার এর দায়িত্বে থাকেন তারা বারেবারে মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা অবশ্যই করে থাকেন “আরও ভিড আমরা করতে চাই নি, কারণ যা করা হচ্ছে আইন মেনেই করা হচ্ছে। যা করবেন আইন মেনে করবেন সোশ্যাল ডিসটেন্স বজায় রাখুন”।
মোবাইলে একে অপরকে ফোন করলেই কানে শোনা যায় সোশ্যাল ডিসটেন্স অন্তত ২ মিটার দূরত্ব মেইনটেইন করার কথা। প্রচারে আছে হাত ধোবেন মাস্ক পড়বেন। কিন্তু কর্মীসভার, রাজনৈতিক সভা, বাসে, ট্রেকারে গাদাগাদি ভিড়ে নাজেহাল অবস্থা কিন্তু সকলে মুখে একটাই কথা “আইন মেনেই সব পরিষেবা”।
আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে রেল পরিষেবা। লোকাল ট্রেন চলাচল, স্টেশনে স্টেশনে মানুষের লম্বা লম্বা বিশাল ভিড় অথচ রেলের পক্ষ থেকে স্টেশনে মানুষ কিভাবে দাঁড়াবে তার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে গোল গোল বৃত্ত এঁকে দেওয়া হয়েছে। কেন? মানুষকে নাকি এই বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বা এক অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রেল কর্তৃপক্ষ এটা একে দিলে, তাদের দায়িত্ব নাকি শেষ। আর তাদের কোনো দায়িত্ব নেই।
বিভিন্ন স্টেশনে আজ দেখা গেল আর পি এফ ও পুলিশের আধিকারিক থেকে শুরু করে সিভিল ভলেন্টিয়ার, বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন , লাইন দিয়ে তাদের ট্রেনে ওঠার ব্যবস্থা করেছেন, হুডো হুডি হলেই আটকানো হচ্ছে তাদের। স্টেশনে স্টেশনে ঘোষণাও করা হচ্ছে, সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে চলুন এক অপরের গায়ে গায়ে দাঁড়াবেন না। তবে এসব ব্যবস্থা স্টেশনে ট্রেনে ওঠার আগে। ট্রেনে উঠে পড়ার পর নাকি আর করোনার কোন ভয় নেই। ট্রেনের কামরার ভেতরে গাদাগাদি করলেও কোনো চাপ নেই। কারণ! কারণ একটাই , যা কিছু হচ্ছে সবটাই আইন মেনে।।
অবতক খবর-এর পক্ষ থেকে আমরা পুজো উদ্যোক্তা থেকে পুলিশ প্রশাসন, পরিবহন থেকে রেল স্টেশন যারা যাত্রীদের সোশ্যাল ডিস্টানসিং এর প্রচার চালিয়ে সচেতন করছেন তাদের কাছে এই আইন মেনে কথার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। প্রায় সকলেই একই উত্তর দিয়েছেন। প্রচারিত হচ্ছে, মোবাইলে বারে বারে বলছে, খবরের কাগজেও রোজ বেরোচ্ছে, সব জায়গায় তো ঘোষণা হচ্ছে, শুনে নেন, বুঝতে পারছেন না, কি বলা হচ্ছে? আইন মেনে কাজ করছি আমরা।(ছবি : সৌজন্য ফ্রি প্রেস জার্নাল ও অন্যান্য )