অবতক খবর,১৪ নভেম্বর: বাঞ্চারাম কিংবদন্তী, তার বাগান কখনো শূন্য হবার নয়। এক এক করে কত কথা জমা রয়েছে, এই তো সেদিন শীতের দুপুরে ওনার বাড়ির বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম একসাথে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম উত্তম কুমারকে কেমন লাগতো? কোনো সংকোচ না করেই চওড়া হাসিমুখে উনি জানিয়েছিলেন “উত্তম কুমার ওরে বাবা সে সুদর্শন পুরুষ” ওনার চোখে মুখের উজ্জ্বল্য সাথে সারল্য সেদিনের কথাতেই বোঝা গিয়েছিলো মহানায়কের কতটা কাছের মানুষ ছিলেন মনোজ মিত্র আসলে প্রতিভার কম্পিটিশন হয় না সেকাল বোধহয় ছিল অন্য ডিজিটালি নয়।

বয়স প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই টকটকে ফর্সা রঙ চামড়ায় বলিরেখার আঁচড়ে আমার মনে একসময়কার মনোজ মিত্রের নায়ক চেহারা ঘুরে ফিরে আসছিল বারংবার, মনে হচ্ছিলো তিনি বরাবরই চিরসবুজ সুন্দর ব্যক্তিত্বের আড়ালে নির্ভেজাল মানুষ মনোজ মিত্র এবং এই নব্বই এর কাছে এসেও তেমনি টাটকা ছিল ওনার স্মৃতির পাতাগুলো সল্টলেকের বাড়ির দোতলা বারান্দায় আমার সামনের এক চেয়ারে বসে অভিনেতা মনোজ মিত্র।, মেয়ে ময়ূরী মিত্র ও বাবার মতোই অসাধারণ নাট্যব্যাক্তিত্ব। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো মনে এত বিরাট মানের অভিনেতা হয়েও অতি সাধারণ ভাবে মানুষের সাথে কি ভাবে মিশে যেতে পারেন সেদিনেই বুঝেছি। প্রকৃতির নিয়মে চামড়ায় বয়সের ভাঁজ পড়লেও চলন আর কথাবার্তায় বাঞ্চারাম ছিল বেশ স্পষ্ট।

আমি হতবাক হয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম সত্যি অভিনয় ছিল ওনার চোখে মুখে। আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনি চা খাবেন? আমি বললাম হ্যাঁ। একসাথে চা খাওয়া গল্প আড্ডা সেই শুরু এই নিয়ে বারংবার ছুটে যেতাম ওনার বাড়ি। সেই শুরু মাঝে মাঝে কথা বার্তা কালের নিয়মে হঠাৎ ছন্দপতন বাঞ্চারামের বাগানে আলো নিভলো। অসুস্থ ছিলেন কিন্তু চলে যাওয়াটা মেনে নিতে কষ্ট হয় বৈকি।

বাঙালি ভালোই জানে তার আছে ভুরি ভুরি তবুও তো মনোজ মিত্র ছিলেন অগোচরে। বাঙালিকি বোঝে নি সেদিন? আর কোথাই বা গেল সেই বাঞ্চারাম? কৈ নতুন আর তৈরী হলো না তো? নাকি ডিজিটাল এর পেজে

সেদিনের ‘নেকড়ে’ ‘সাজানো বাগান’ নাটক দেখানো হয়না? পরে বুঝলাম আসলে বাঞ্চারাম কেবল তো একজন ই হয় দশজন তা পারে নাকি?এত সহজে তার সাজানো বাগানে ফুলফোটাতে।

কথায় কথায় জেনেছিলাম এই ইন্দ্রাস্ট্রি তে ওনার সো কল্ড কোনো গড ফাদার ছিল না কিন্তু কম্পিটিশন ছিল ভয়ানক। তাই হয়তো উত্তম সৌমিত্র, পাহাড়ি সান্যাল ছবি বিশ্বাস জোহরের পাশাপাশি সেদিন মনোজ মিত্র নামটা উঠছিলো তরতড়িয়ে। কৌতূহল হয়ে শত্রু সিনেমার একটা অংশের অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন করায় আমি শুনে হতবাক হলাম যাত্রা থিয়েটার দেখেই একদিন তৈরী হয়েছিল ” সুন্দরম ” কিংবা “গন্ধর্বর ” সৃষ্টকর্তা। তাঁর সাজানো বাগান সেদিন যেমন মুগ্ধ করেছিল তপন সিনহাকে তেমনি অধ্যাপনার পাশাপাশি শূন্য প্রজাপতি, নীলা, সিংহদ্বার কেনারাম বেচারাম চরিত্ররা মুগ্ধ করেছিল আটপৌরে বাঙালিকে। মানুষটার হাতধরে বাংলা নাটকের পর্দা উঠেছিলো সানন্দে। ঘরে বাইরে,গণশত্রু, রাখিপূর্ণিমায় নায়ক, খল নায়ক, কৌতুক সবেতেই মনোজ বাবু ছিলেন অনবদ্য অসামান্য। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে নাট্য জগতে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে মনোজমিত্র নামটা সর্বক্ষণ ঘোরাফেরা করে।

১৯৩৮ এ খুলনায় জন্ম হয়েও পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মসূত্রে হয়েছিলেন কলকাতাবাসি আর বাঙালির মনে ভালোবেসে থেকে গেলেন কালজয়ী বাঞ্চারাম হয়ে। বঙ্গ সংস্কৃতির আরেক নক্ষত্র পতনে মনখারাপ বাঙালির।

সুমনা আদক –