অবতক খবর,৩০ নভেম্বর,বাঁকুড়া:- গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তরে চোখ মেললেই উঠে আসবে বিভিন্ন সংগ্রামের চিত্র কোথাও একটা জাতির সংগ্রাম, কোথায় একটা প্রতিষ্ঠানের সংগ্রাম, কোথাও আবার একটা ব্যক্তির সংগ্রাম।জীবনের প্রত্যেকটা সংগ্রামের নাম হয়তো ঠিকঠাক প্রদান করা যায় না,তবুও যেন এই নামহীন সংগ্রাম সমাজে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রত্যেকটা সামাজিক জীবের মধ্যে।আজ এক সংগ্রামে কথা বলতে চলেছি যা জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম টিকে থাকার সংগ্রাম, বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থানার প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলা এই বামিরা গ্রামে বসবাস দেবনাথ বাবু ও তার দুই মেয়ে সায়ন্তি ও বৃষ্টি,বড় মেয়ে সায়ন্তি দশম শ্রেণীতে পাঠ্যরত ছোট মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠরত,বাবার আর্থিক অনটন দূর করার জন্য তারা গান-বাজনা এবং পড়াশুনার পাশাপাশি একটি সার্কাস সংস্থায় কাজ করার জীবিকাকে বেছে নিতে হয়েছে। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে টিউশন পড়া টিউশন শেষে খাওয়া-দাওয়া করে আবার সার্কাসের উদ্দেশ্যে রওনা, দীর্ঘ 47 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সার্কাস করতে আবার রাত্রি এগারোটা সময় এই হাড় হিম করা শীতের বাড়ি ফেরা এই বয়সে সায়ন্তি বৃষ্টি কে অসহায় বাবার সহায়-সম্বল হয়ে উঠেছে এই দুই বোন , কিন্তু সায়ন্তি বৃষ্টি এভাবেই তাদের জীবন কাটাতে চায় না চায়না তাদের পড়াশোনার জীবন থেকে বঞ্চিত হতে চায়না , তাই তারা সার্কাসের মাঝে শোএর ফাঁকে ফাঁকে তাবুতেই সেরে নেয় তাদের পড়াশোনা ।
সায়ন্তি বৃষ্টির বাবা দেবনাথ বাগদি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে শিক্ষায় যদি মূল হাতিয়ার হয় তার গেড়োও পার করে এসেছেন দেবনাথ বাবু। জোড়া বিষয়ে সেরেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি,সাথে পূর্ণ করেছেন শিক্ষক প্রশিক্ষণের বি.এড ডিগ্রী তবুও হয়তো ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে দেবনাথ বাবু এক সাধারন গ্রামীণ কৃষক এ পরিণত হয়েছেন।সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বা একটা চাকরি নিয়ে সুখের সংসার ধর্ম পালন করার জন্য যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে দেবনাথ বাবুর তবুও এই অবস্থা কেন? বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে রাষ্ট্র নয়? কি বলেন।
দেবনাথ বাবুর বড় মেয়ে সায়ন্তি জানায়,”ছোট থেকে দেখে আসছি বাবার সংগ্রামকে,অনেক দূর পড়াশোনা করেও ফল কিছু মেলেনি বাবার,তাই বাবাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার জন্য সার্কাসের এই কাজকে বেছে নিয়েছে সে”।
দেবনাথ বাবু জানান,”আমার দুই কন্যা সন্তানের মধ্য আমার বড় কন্যা ছেলের ভূমিকা পালন করে আমার সংগ্রামে অনেকটাই সাহায্য করছে”।
বাংলা মায়ের বুকে চরৈবেতি তে গেলে আরো কত দেবনাথ , কত সায়ন্তি বৃষ্টি চোখে পড়বে,তাদের সংগ্রামকে আমাদের আরো যে কত অগোছালো পাণ্ডুলিপি দিয়ে তুলে ধরতে হবে তার ঠিক নেই।এই ধরনের মানুষ গুলো করুন দৃষ্টিতে বারবার সমাজের কাছে আর্জি জানায় যেন কোন একটা অদৃশ্য শক্তি যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।