অবতক খবর,১৫ সেপ্টেম্বর,বাঁকুড়া:- বাস্তবের দুর্গা ঝরনা ও লক্ষ্মী, দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে আগামীর পথে।

মানুষের অমূল্য জীবন সর্ব শক্তিমান কর্তৃক প্রদত্ত। সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ রুপে বিবেচিত। আর একটি সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে ইশ্বর তার দায়িত্ব শেষ যেখানে করেন,সেখান থেকেই শুরু হয় মানুষের সংগ্রাম। টিকে থাকার সংগ্রাম, একটা নামহীন যুদ্ধ। কিছু যুদ্ধের কথা আমরা চাক্ষুস না করলেও পড়েছি ইতিহাস বইয়ের পাতায়। আর ইহকালে মানুষে মানুষে পার্থিব সম্পদ নিয়ে যুদ্ধ তো সদাই চলমান। এসবের পাশাপাশি কিছু যুদ্ধ আছে যা গতানুগতিক জীবনধারা থেকে সম্পূর্ন আলাদা। যাকে আমরা জীবনযুদ্ধ বলি।
আজ একটু অন্যরকম যুদ্ধের উপাখ্যান আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

আকাশে বাসাতে আগমনীর সুর উঠেছে, নদী পাড় গুলো কাশে ভরে উঠেছে। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের অবিরাম বিচরন শুরু হয়েছে। এরই মাঝখানে দুই দুর্গা যেন জীবন সংগ্রামের জন্য পথে নেমেছে। গল্পটা রস আস্বাদন করার কোন রঙীন রুপকথার গল্প নয় বা সোনালী মলাটে ভাঁজ করা মোটা হরফে লেখা কোনো উপাখ্যানও নয়, এ যেন একটা সংগ্রামী এবং সাহসী সত্ত্বার একটি বাস্তবিক রঙীন দিক।

বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকের হলুদমনি গ্রামে একচিলতে একটি চায়ে দোকান ছিল নন্দী বাবুর। সেখানেই শখ করে বাবার সাথে হাত লাগাতে আসতো দুই বোন ঝর্না আর লক্ষ্মী। সবে মিলে চায়ের দোকানই ছিল তাদের রোজনামচা পরিচালনা করার একমাত্র অবলম্বন। খেয়ে পড়ে দিনগুজরান করতো এই পরিবার। মোট আটটি সন্তান নিয়ে পরিবার ছিল ছায়াদেবীর, বর্তমানে দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে সংসার ছায়া দেবীর। কিন্তু মানুষ যে অমর নয় একথা আরেকবার প্রমান করে সব কিছু ছেড়ে সাত মাসে আগে ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যু হয় ঝর্না এবং লক্ষ্মীদের বাবার। এর জেরেই বাধ্য হয়ে সংসারাস্থিত দুইভাই এবং মায়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে বাবার দেখানো পথে যাত্রা শুরু করে এই দুই বোন। তারা তাদের বাবার চায়ের দোকান দিয়েই তাদের পরিবারের মুখে দু-বেলা দুমঠো অন্ন তুলে দিচ্ছে। জীবনযুদ্ধের এরম অধ্যায় খুঁজলে আর কোথায় পাওয়া যাবে বলুন? এই বয়সে যেখানে যখন খেলাধুলো,স্কুল বা কলেজ জীবন,হাসি-ঠাট্টা দিয়ে জীবনের অধ্যায় রচিত হওয়া উচিত সেখানে দুর্গম পথ বেছে নিতে হয়েছে এই দুই বোনকে।

ঝর্ণা এবং লক্ষ্মীদের মা ছায়া দেবী জানান “কিছু হাঁস-মুরগী, একটা চটাফাটা বাড়ি আর ঐ চায়ের দোকান একমাত্র অবলম্বন তাদের।কোনোরকমে দিন পেরিয়ে যায়,সরকারী সুবিধা বলতে কিছুই মেলেনি এখনো”।স্থানীয় এক বাসিন্দা কাজল মিদ্যা জানান “খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে এই পরিবার, ভোরবেলা থেকে দোকান খুলে এরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে”। গনেশ চন্দ্র দে নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “ছোট বেলা থেকে ওদের দেখে আসছি, ওর বাবার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল,এখন এদের যা কষ্ট আসল দুর্গা এদেরই বলা যেতে পারে”। ঝর্ণা এবং লক্ষ্মীদের ছোটো ভাই রাজু জানান, “দিদিরা অনেক কষ্ট করে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সরকারি সাহায্য বলতে এখনো কিছু পাইনি। তবে ভবিষ্যতে এই হাল আমি ধরার চেষ্টা করবো”। স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিরের দৃষ্টির গোচরে পুরো বিষয়টিকে আনা হয়েছে।তারা যাতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পায় পুরো বিষয়টিকে তিনি খতিয়ে দেখছেন।

এই ধরাধামেই যেন দুই দুর্গা তাদের কুড়িটি হাত নিয়ে জীবনে বৈতরনী পার হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত। ঝর্না এবং লক্ষীদের এই জীবনযুদ্ধ হয়তো অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াতে দেশের হাজারো ঝর্না এবং লক্ষ্মীদের। আমাদের চ্যানেলের পক্ষ থেকে এই প্রকৃত দুর্গাদের জানাই কুর্নিশ।