অবতক খবর,২৪ নভেম্বর,বারাসত: বাড়িতে রয়েছে স্বামী ও পুত্র। অথচ, ঘরের মধ্যে তিন দিনের বেশি সময় পড়ে রয়েছে গৃহবধূর মৃতদেহ। তীব্র দুর্ঘন্ধে স্থানীয়রা অতিষ্ট হয়ে পুলিসকে খবর দিতেই বাড়ি থেকে উদ্ধার হল মহিলার পচাগলা মৃতদেহ। বুধবার বিকেলে অশোকনগরের সুভাষপল্লি এলাকার এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম মালা দত্ত(৩৭)। তাঁর স্বামীর নাম কল্যাণ দত্ত। বছর আঠেরোর ছেলের নাম অর্ঘ্য দত্ত। সঠিক কি কারণে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হল পুলিস তা খতিয়ে দেখছে। একই বাড়িতে থেকেও কেন পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের বা পুলিসকে এই বিষয়ে কিছু জানায়নি, কেন মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেনি তানিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকনগর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকায় কল্যাণ দত্তের বাড়ি। তিনি জলের পাইপ লাইনের কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী মালাদেবী দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ু রোগে ভুগছেন। ছেলে অর্ঘ্যেরও শারীরিক সমস্যা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এই পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিশতোনা। বাড়ির বাইরে গৃহবধূ বের না হওয়ায় কারোর সঙ্গে যোগাযোগও তেমন ছিলনা। মঙ্গলবার বিকেল থেকে প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেতে শুরু করেন। কোথাও কিছু মারা গিয়েছে ভেবে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কিন্তু এদিন সকাল থেকে পচা গন্ধ্য মারাত্মক ভাবে বেড়ে যায়। দুপুরে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধ্যান করে তাঁরা বুঝতে পারেন দত্তদের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ্য বের হচ্ছে। এরপর দ্রুত পুলিসকে খবর দেওয়া হয়। অশোকনগর থানার পুলিস এসে দেখে বাড়িতে রয়েছে ছেলে ও স্বামী। ঘরের মধ্যে বিছানার উপর গৃহবধূর পচাগলা মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। গায়ের উপর চাদর চাপানো আছে। পুলিস দ্রুত মৃতদেহ উদ্ধার করে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। বৃহস্পতিবার মৃতদেহ বারাসত জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।
মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিস। বাড়িতে মৃতদেহ সংরক্ষণ, কিংবা কোনও তুকতাক করে মৃতকে বাঁচানোর চেষ্টারও কোনও নমুনা পাওয়া যায়নি। কিংবা মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টাও করা হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, মৃতের স্বামী ও পুত্র মানসিক রোগে অসুস্থ। পাশের ঘরে মৃতদেহ পচলেও কিভাবে ছেলে ও স্বামী নির্বিকার থাকলেন তানিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মৃত গৃহবধূর ভাই মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, বিনা চিকিৎসায় দিদিকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি গত শুক্রবার এসেছিলাম।
দিদি বলেছিল, খুব কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার দেখাচ্ছেনা। ওষুধ এনে দিচ্ছেনা। আমি চিকিৎসার জন্য ১৭হাজার টাকা দিয়ে আসি। জামাইবাবুকে ফোন করলে ফোন ধরতনা। এদিন পুলিসের ধমকে ভাগ্না ফোন করে ঘটনা জানিয়েছে। আমাদের অনুমান দিদিকে ওরা খুন করেছে। তানাহলে কেন ওরা এতদিন কিছু জানায়নি। বাড়িতে মৃতদেহ পচলেও ওরা কিভাবে কয়েক দিন ধরে সেখানে চুপচাপ বসে খাওয়া দাওয়া করেছে? আমরা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করব।