বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, 31শে অক্টোবর :: মুকুল রায়কে বাংলার রাজনৈতিক চাণক্য এমনি এমনি বলা হয় না,তা ফের একবার প্রমাণিত হল। যখন কেন্দ্রে বিজেপি নেতারা এক কোপে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরমপ্রিয় সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বাবু কে পদ থেকে সরিয়ে তার জায়গায় অমিতাভ চক্রবর্তীকে আনা হলো। সূত্রের খবর,অমিতাভ বাবুকে বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব থেকে তুলে এনে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা দুবছর ধরেই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু দীলিপবাবুর হস্তক্ষেপে তা হয়ে ওঠেনি।
মুকুল রায়ের দূরদর্শিতায় এবার কাঁত হয়েছেন সুব্রতবাবু। ভেঙে গেছে রাম-লক্ষ্মণের জুটি। তবে সুব্রতবাবুর অপসারণ শুধু নয়, এবার রাজ্যের নির্বাচনীর দায়িত্ব মুকুলবাবু পেতে চলেছেন বলে সূত্রের খবর। তাছাড়া ছেলে শুভাংশু রায়ও বিজেপি যুব মোর্চার মুখ হয়ে উঠতে উদ্যোগী হয়ে রাজনৈতিক বাজারে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। সেটি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ইতিমধ্যে মুকুল প্রিয়, সাংসদ ও যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ-র ক্ষমতা, কলমের এক খোঁচায় কেড়ে নেন। দীলিপবাবু সৌমিত্র দ্বারা গঠিত সমস্ত জেলা যুব কমিটির বাতিলের ঘোষণা করেন। তাছাড়া জেলার যুব মোর্চার সমস্ত সভাপতিদের ক্ষমতা কেড়ে নেন ও তাদের দায়িত্ব তিনি জেলার বিজেপি অধ্যক্ষদের হাতে তুলে দেন।
দিলীপ ঘোষের এহেন কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ সৌমিত্র খাঁ, তিনি রেগে লাল। তিনি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ জানান, কিন্তু কিছুই হয়নি। অবশেষে তিনি রেগে মেগে পদত্যাগের ঘোষণা করে দেন ও রাজ্য বিজেপি নেতাদের নিয়ে গঠিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেন। সৌমিত্র খাঁ ভেবেছিলেন তাঁর গুরু মুকুল রায় ও তার অনুগামীরা এ নিয়ে সরব হবেন। কিন্তু মুকুল রায় ও তার অনুগামীরা এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। শুধু তাই নয়,তারই যুব সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পান্ডা তার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন ও তাকে সংযত হবার ও দিলীপ ঘোষের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন।
সৌমিত্র খাঁ তার ভুল বুঝতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তাকে পদ থেকে সরাতে এই ষড়যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে আর তাতে তিনি ফাঁদে পা দিয়েছেন। তিনি পরে মাথা নিচু করে তার ঘোষিত পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নিয়ে আবার নিজেই সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগদান করেন।সব মিলিয়ে এক কথায় বলা যেতে পারে যে সৌমিত্র খাঁ এখন এক ঘরে,ক্ষমতাহীন কাগুজে বাঘ বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে সৌমিত্র খাঁ কে ।তাই তার জায়গা পেতে এখন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায় উঠেপড়ে লেগেছেন।
বীজপুর বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে রনঙ্গদেহী ভূমিকায় রয়েছেন। যখন মুখে যা আসছে তাই বলে দিচ্ছেন। আর দিলীপ ঘোষ এর মত তিনিও “বদল নয় বদলা আগে” মত বয়ান দিয়ে বাজার গরম করে চলেছেন। শুভ্রাংশু বাজারে তার দর বাড়াতে রাজনীতির নতুন নতুন পথ অনুসরণ করছেন।
এখন প্রশ্ন, যে শুভ্রাংশু রায় সব সময় উন্নয়ন , শান্তির নামে রাজনীতি করতে অভ্যস্ত সেই শুভ্রাংশু এখন চিরা-পরিচিত রাস্তা ছেড়ে শুধু বুলি আর গরম গরম কথা বলে, বাজার গরম করছেন কেন?
রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মতে শুভ্রাংশু রায় বুঝতে পেরেছেন যে, বিজেপি দলের মাথায় জায়গা করতে হলে উন্নয়ন বা শান্তির কথা বলে লাভ নেই। শুধু গরম গরম ভাষণ দিতে হবে। তাই বাস্তবিক রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত বুলি ছেড়ে বাজার গরম করছেন। আর এতে লাভবানও হচ্ছেন তিনি। বয়ানবাজির জন্য রাজ্য রাজনীতিতে চর্চায় উঠে আসছেন শুভ্রাংশু রায়। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চের ডাক পাচ্ছেন শুভ্রাংশু, বাড়ছে তার ডিমান্ড।
জানিয়ে রাখি যে, মুকুল রায় বিজেপি তে যোগদান করে তাঁর ছেলে শুভ্রাংশুকে রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি পদে দেখতে চেয়েছিলেন একসময়। কিন্তু মাঝে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র বিজেপি তে অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে মুকুল বিজেপিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
আর সেই সুযোগে মুকুল রায়কে তার অস্ত্র দিয়েই তাকে দলের সাইডলাইনে পাঠিয়ে দেন তার বিরোধীরা। তারমানে মুকুল অনুগামীদের বিভিন্ন পদে জায়গা দিয়ে তাদেরকে মুকুল থেকে দূরে সরানোর চেষ্ঠা করা হয় ও মুকুলকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। শুধু তাই নয় তার প্রিয় পাত্র সৌমিত্র খাঁ কে যুব মোর্চার সভাপতি করে তাঁর ছেলের স্বপ্নে জল ঢেলে দেয় দিলীপ ঘোষ-সুব্রত জুটি । তবে শুভ্রাংশুকে যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের পদ অফার করা হয়েছিল বলে খবর। কিন্তু তিনি সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। চুপ করে ঘরে বসে পড়েছিলেন কিছুদিনের জন্য শুভ্রাংশু।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে,কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাংলার রাজনীতিতে সক্রিয় হতেই ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন মুকুল রায়। কৈলাসের হাত ধরেই মুকুলকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ সভাপতির পদে আনা হয়। দলের ভেতরে আলোচনা যে, এখন রাজ্য রাজনীতিতে মুকুল,কৈলাশজির হাত ধরেই দিলীপ-সুব্রত জুটি ভাঙতে সফল হয়েছেন। তিনি বিজেপিতে এখন অনেক বেশ প্রাসঙ্গিক।
তাছাড়া আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্যে নির্বাচনকে মাথায় রেখে বৈঠকে বসতে আসছেন ।নির্বাচন মানে অঙ্ক, ছক, স্ট্রাটেজি। আর ভোটের স্ট্যাটিজি মানেই হলো মুকুল রায়। তাই নির্বাচনের আগে দলে মুকুল রায়ের যে দায়িত্ব আর গুরুত্ব আরো বাড়তে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
তাছাড়া দিলীপ-সুব্রতর জুটিতে ছেদ, সৌমিত্র খাঁ এর ক্ষমতা খর্ব, যুব সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পান্ডার সৌমিত্র বিরোধী বয়ান, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মুকুল রায়ের বাড়িতে আগমন ও শুভ্রাংশুকে আশীর্বাদ এবং সর্বোপরি শুভ্রাংশু রায় হঠাৎ করে এত বেশি মারমুখী হয়ে পড়ার অনেকটাই সংকেত দিচ্ছে। এইসব কর্মকান্ড এখন রায় পরিবারের আরো বেশি উত্থানের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই অনেকে তো ধরেই নিয়েছেন যে মুকুলবাবু বিজেপির রাজ্য নির্বাচন কমিটির প্রধান ও শুভ্রাংশু রায়ের যুবনেতার পদে অভিষেক এখন সময়ের অপেক্ষা।