অবতক খবর,৭ নভেম্বর: সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তিনি ৪ নভেম্বর দীপাবলির রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর শেষ যাত্রা ছিল দলমত ছাপিয়ে উষ্ণতায় শেষ যাত্রা, এমনই একটি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার খবর। নিশ্চিত তাঁর শেষ যাত্রায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কিন্তু এই সুব্রত মুখোপাধ্যায় একজন বিতর্কিত নেতা। ‌অনেক বিরোধী দলের মতে তিনি পদ খুবই ভালবাসতেন তিনি জীবনে কোনদিনও পদবিহীন ছিলেন না এবং তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে এমনকি কংগ্রেসের একটি পক্ষ তাঁকে তরমুজ বলতেন। তরমুজ শব্দটি এই ভাবেই রাজনীতিতে একটা অন্যমাত্রা পেয়ে যায়। তিনি একজন শ্রমিকনেতা আইএনটিইউ সি’র সভাপতি ছিলেন। তিনি একজন কংগ্রেস কর্মী এবং কংগ্ৰেসী নেতা হিসেবে ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি পুলিশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেটি ১৯৭১ সাল। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি সুব্রত মুখার্জীর নেতা। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং সুব্রত মুখার্জীর নেতৃত্বে তখন কংগ্রেস রাজনীতি অত্যন্ত উত্তাল ছিল। তিনি ছাত্র নেতা হিসেবে তখন নাম করে ফেলেছিলেন একথা সত্য। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের নকশালদের হত্যা, বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযান এবং ১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থার সময়ে পুলিশ দপ্তরের ক্রিয়া-কলাপ জনতার বিরুদ্ধে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে অনেকেই নকশাল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চারু মজুমদারের মৃত্যু, সাংবাদিক এবং বামপন্থী চিন্তক সরোজ দত্তকে হত্যা এবং গুম করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পুলিশ এবং কংগ্রেস কর্মীদের যৌথ চক্রান্ত, এমনই বিরোধীরা বলে থাকেন।

যাই হোক, সুব্রত মুখার্জী কাঁচরাপাড়া এসেছিলেন ১৯৯২ সালে। বাগমোড় নেতাজি সঙ্গের মাঠে। সেই সময়ের কংগ্রেস নেতা কংগ্রেস সেবাদলের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি দীপন দত্ত পরপর তিনবছর মহিলা ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। প্রথম বছর ১৯৯২ সালে এই ভলিবল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ের দিন কংগ্রেস নেতৃত্বদের তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই সময়ে সুব্রত মুখার্জী ছিলেন আইএনটিটিইউসি’র প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রেসিডেন্ট। তাঁর সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন সোমেন মিত্র,মানস ভুঁইঞা, প্রদীপ ভট্টাচার্য্য, শংকর সিং প্রমুখ। সেই প্রতিযোগিতায় পুরস্কার তিনি বিজয়ী এবং বিজিত অধিনায়কদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি মহিলাদের মধ্যে ক্রীড়া প্রসারের জন্য দীপন দত্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন।

দীপন দত্ত জানিয়েছেন, আমি ছাত্রনেতা হিসেবে তাঁকে চিনি। তার দ্বারা এই ছাত্র আন্দোলনে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তিনি এই মুহূর্তে অত্যন্ত শোকাহত। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে সুব্রত মুখার্জীর সঙ্গে আমার যচেঐঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ছিল। এমনকি কোন একটি বিশেষ কারণে অল ইন্ডিয়া ওয়ার্কিং কমিটির প্রেসিডেন্ট অমর সিংহের সঙ্গে তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি দিল্লিতে যাওয়ার রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিটটি পর্যন্ত কনফার্ম করে দিয়েছিলেন।

১৯৭২-এর সন্ত্রাস, কাশীপুর বরানগরের হত্যাকাণ্ড,সরোজ দত্তের খুন এবং চালু মজুমদারের হত্যা প্রসঙ্গে দীপন দত্ত বলেন, ঘটনাটি তাঁর পুলিশ মন্ত্রিত্বের আমলে ঘটে থাকলেও, তিনি ছিলেন একজন ডেপুটি মন্ত্রী। তখন রাজ্য প্রশাসনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্ধান্তশঙ্কর রায়। এই ঘটনার জন্য ওই ছোট্ট একটা উপমন্ত্রীকে দায়ী করা যায় না। নিশ্চিত প্রশাসনের উচ্চতম মহলের বা নেতৃত্বের বা প্রধানের নির্দেশ না থাকলে পরে এসব ঘটনা ঘটতে পারে না।