বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ
অবতক খবর,২ ফেব্রুয়ারি: বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক দলের রাজনীতি কোনদিকে এগোচ্ছে তা নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন দলের কর্মীরাই।
আগামী মাসে গোটা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হচ্ছে পরিবর্তন যাত্রা। এই যাত্রায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি,অমিত শাহ, জয়প্রকাশ নাড্ডা সহ পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় পদাধিকারিকরা। কিন্তু এই যে পরিবর্তন যাত্রা কর্মসূচি গ্ৰহণ করেছে বিজেপি তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে জেলায় জেলায়। আর কে প্রমুখ হবে সে নিয়েও প্রস্তুতি চলছে।
ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার প্রস্তুতি যে মোটেই ভালো নয়,তা আপাতদৃষ্টিতেই বোঝা যাচ্ছে। ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায় যারা পুরনো বিজেপি কর্মী, অর্থাৎ যারা লড়াই করে সাংসদকে ক্ষমতায় আনলেন,যারা মানুষের জন্য লড়াই করলেন,আজ তারাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন এই বিজেপি দলে। পুরনো কর্মীদের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সভা, মিটিংয়ে সমস্ত ক্ষেত্রেই বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ যাদের বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছিলেন সেই মানুষই এখন বিভ্রান্ত হচ্ছেন যে তারা কাদের দেখে,কাদের কথা শুনে ভোট দিয়েছেন! কারণ যাদের কথা শুনে তারা ভোট দিয়েছেন তাদের দেখা যাচ্ছে পিছনের সারিতে অথবা দেখাই যাচ্ছে না। আর যাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন তারাই এখন সামনের সারিতে বসছেন।
গতকাল পরিবর্তন যাত্রার প্রথম পর্যায়ের প্রস্তুতির জন্য ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রবীন ভট্টাচার্য্য এক আলোচনা সভা করেছিলেন। সেই আলোচনা সভার মূল বিষয় ছিল পরিবর্তন যাত্রার প্রমুখ কে হবেন?
সূত্রের খবর,এই আলোচনা সভা শুধুমাত্র লোক দেখানো।রবীন ভট্টাচার্য্য নাকি আগে থেকেই স্থির করে রেখেছেন যে এই পরিবর্তন যাত্রার প্রমুখ কে হবেন।
এই নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে।
এদিকে পুরনো বিজেপি কর্মীরা বলছেন,এটি ছিল লোকদেখানো আলোচনা সভা। বরীন ভট্টাচার্য্যের সমস্ত কিছু পূর্ব পরিকল্পিত।
এর আগেও কমিটি গঠন নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেটিও আগে থেকেই পরিকল্পনামাফিক সব স্থির করে রেখেছিলেন তিনি। যেহেতু সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল তাই সেই তালিকা অনুযায়ী কমিটি গঠন হয়নি।
তবে ওই তালিকা বাতিল হলেও নব্য বিজেপিদের মধ্যে থেকে কনভেনর ও নির্বাচন কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কখনো বিজেপির পতাকা ধরেছেন কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পুরনো বিজেপি কর্মীরা।
তবে এখন বিতর্ক উঠেছে সায়ন্তন সান্যালকে নিয়ে। কারণ তিনি বিজেপির একজন ইনভাইটেড মেম্বার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাকে নাকি মানুষের অর্থ তছরুপের জন্য ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
আর তাকেই এখন এই পরিবর্তন যাত্রার প্রমুখ করা হচ্ছে। এমনই জানিয়েছেন পুরনো বিজেপি কর্মীরা।
সায়ন্তন সান্যালকে প্রমুখ করার জন্য গতকাল রবীন ভট্টাচার্য্য যে আলোচনা সভা ডেকেছিলেন তাতে ২১ জনের যে এক্সিকিউটিভ কমিটি রয়েছে,সেই কমিটির সদস্যরা এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন না। উল্টে তারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবে এই ২১ জনের মধ্যে ৫ জন এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কমিটির সেক্রেটারিকে এক ইনভাইটেড বিজেপি নেতা অপমান করেছেন। ফলে তাদের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বলছেন,এই সায়ন্তন সান্যালকে কারা আনল? আর কেনই বা তাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে দল?
৬ বছরের জন্য দলে সাসপেন্ড সায়ন্তন সান্যাল। তাকে সাসপেন্ড করেছিলেন প্রাক্তন সভাপতি অশোক দাস,তার প্রমাণও রয়েছে। তবে তাকে প্রমুখ করার কারণ কি?
এই পরিস্থিতিতে এইসকল প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন পুরনো বিজেপি কর্মীরা।
গত পরশু নৈহাটির গরিফায় পুরনো বিজেপি কর্মীদের নিয়ে একটি পিকনিকের আয়োজন করেন পুরনো বিজেপি নেতা বিনোদ গোর। সেখানে প্রায় ১৫০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর,এই পিকনিক শুধুমাত্র রবীন ভট্টাচার্য্যকে দেখানোর জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। কারণ তিনি শুধু নব্য বিজেপিদের দলে প্রাধান্য দেন। তাই তাঁকে দেখানোর জন্য এদিন সেখানে প্রচুর পুরনো বিজেপি কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল।
অন্যদিকে নবদ্বীপ জোনের কো-কনভেনর অমিতাভ রায়, তিনিও এসেছিলেন গতকালের আলোচনা সভায়। তবে তিনিও জেলা সভাপতির সুরে সুর মিলিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা কেন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন,কেন তারা উপস্থিত ছিলেন না,সেইসব কিছুই তিনি জানতে চাননি।
এদিকে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায় একমাত্র শুভ্রাংশু রায়কেই দেখা যাচ্ছে,যিনি পুরনো কর্মীদের একটু সম্মান দিচ্ছেন, গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে তাদের কাছে এখন শুভ্রাংশু রায়ই নেতা হয়ে উঠেছেন।