স্যালুট, জনতার দরবার সুপ্রিম কোর্ট!
মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জন ধর্ষককে পুনরায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ
বিলকিস বানো: কী ঘটনা ঘটেছিল সেদিন
তমাল সাহা
এইভাবে একটি অশ্লীল গদ্যের জন্ম হলে জঙ্গলের ভেতরে পড়ে থাকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোর নগ্ন উলঙ্গ দেহ।
সব নগ্ন শরীরই কি দেখা যায়? অন্ধকার পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নেয়। সমস্ত গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে বিলকিস বানোর শরীরের উপত্যকা জুড়ে।
৩ মার্চ ২০০২ গোধরা কাণ্ড ইতিহাসে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এই মহান ভারততীর্থে হয়ে গেছে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সশস্ত্র ঘাতকেরা বিলকিসের পরিবারের ১৪ জনকে খুন করে।
সে এক ভয়ংকর দিন। গুজরাটের দাহোদ গ্ৰাম। বিলকিস তখন ২১, তিন বছরের শিশু সালেহা সহ সমগ্র পরিবার নিয়ে দৌড়াচ্ছিল, লুকিয়ে পড়েছিল গাছভর্তি মাঠের অন্তরালে।
হে মহান বৃক্ষসমূহ পৃথিবীর প্রথম জৈব জন্ম, তোমরা নাকি মহান বোধিবৃক্ষ! ব্যর্থ হয়েছিলে তাদের নিরাপত্তা দিতে!
গর্ভবতী বিলকিসের কোল থেকে হাতছাড়া হয়ে যায় শিশু। আছড়ে মারে তাকে হিংস্র ঘাতক। জ্বলতে থাকে মা ও শাশুড়ির শরীর। মানুষপোড়া গন্ধে বাতাস ভারী।
তারপর? তারপর কি হয়! এবারের ধর্ষণের পালা। ৮ জন নারী পরপর ধর্ষিতা হলে গুজরাটের সবরমতী তীরে আশ্রমিক বাতাস কার পা জড়িয়ে যেন কাঁদতে থাকে!
ধর্ষণের দাপটে মরে যায় শামিম নামের এক যুবতী। গতকালই এক সন্তান প্রসব করেছিল এই মা।সেই নারীই ধর্ষিতা মৃতা,পড়ে থাকে গণতান্ত্রিক মাঠে।
দ্রৌপদীর তো বস্ত্রহরণ হয়েছিল মাত্র, তবু নগ্ন করতে পারেনি দুঃশাসন। উপস্থিত সভাসদজন সরব হয়নি কেউ।
দ্রৌপদীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ বিবস্ত্র অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বলে,এই দ্যাখ আমার দেহজ অমৃতাধার, মর্দনে বিধ্বস্ত কর। এই নে আমার ওষ্ঠ, দংশনে রক্তাক্ত কর। এই নিম্নপ্রদেশ সমর্পণ করি তোদের হাতে, হে আমার ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীনতা!
এই ভারত মহাসাগর তীরে বিলকিস সহ্য করে যায় পরপর ১১ জনের বলাৎকারের ঢেউ।
উলঙ্গ বিলকিস ছুটতে থাকে, দেহাতি গ্রামে পৌঁছে গেলে তাকে পরিধেয় বস্ত্রে আগলে রাখে এক আদিবাসী মা।
এরপরেও কি করে বেঁচে থাকতে পারে বিলকিস? প্লাটিনাম জুবিলি– জাতীয় পতাকা ওড়ে
ধর্ষকেরা ছাড়া পেয়ে যায় স্বাধীনতা দিবসে।
সারে জাঁহা সে আচ্ছা, দেশ হ্যায় হামারা।
ঘরে ঘরে তিরঙ্গার ডানা ছুঁয়ে যায়, দোল খায় দেশপ্রেমের শিস।
ভারতীয় বাতাসে ভাসতে থাকে আমরা স্বাধীন অহর্নিশ
মায়ের নাম হতে পারে নাটোরের বনলতা সেন অথবা গুজরাটের বানো বিলকিস!