অবতক খবর,৩০ অক্টোবরঃ বীজপুরের হাওয়া এখন বেশ গরম। আমরা এই কথা বলছি কারণ গত ২৭শে অক্টোবর রাত দশটা নাগাদ নিজের দলের কর্মীর হাতে হেনস্থা হতে হলো হালিশহর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাস(শিবা)কে। কাউন্সিলর অভিযোগ আনেন উক্ত ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা দেবাশীষ পাল (লাল্টু)-র বিরুদ্ধে। এই দেবাশীষ পাল ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন সক্রিয় কর্মী। একদা তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়ন কমিটিতেও ছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঘটনার দিন রাতে ঘটনার খবর পেয়ে মৃত্যুঞ্জয় দাসের কাছে ছুটে আসেন বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শুভাংশু রায়। তিনি বলেন, শিবা দা দলের একজন পুরনো কর্মী। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে শুরু করে সিপিআইএমের অত্যাচার সবই তিনি দেখেছেন। বড় বড় লিডারদের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তাঁকে এভাবে হেনস্থা করাটা ঠিক হয়নি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার সাথে কথা বললে তিনি বলেন,যারা যারা ২০১৯-এর পর চাটার্ড প্লেনে করে বিজেপিতে চলে গিয়েছিল, তারা যদি ফের দলে ফিরে এসে আমাদের দুষ্কৃতী বলে, তাহলে তারা হয়তো এখনো বিজেপি করছেন।

এদিকে ২৮ অক্টোবর মৃত্যুঞ্জয় দাসের কাছে ছুটে আসেন সাংসদ অর্জুন সিং। কারণ কাউন্সিলর এবং তাঁর পরিবার আতঙ্কে ভুগছিলেন। উল্লেখ্য, মৃত্যুঞ্জয় দাস যেহেতু শিবির বদলেছিলেন, সেই কারণে বেশ কিছুদিন আগেও তিনি আমাদের সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে প্রশ্ন তুলে বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এবং বর্তমানে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের কাছে জানতে চাইছিলেন যে, আমি এমন কি ভুল করলাম যে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যদি কারোর বিরুদ্ধে কোনরকম অভিযোগ না থাকে তবে কাউকে কোন পদ থেকে সরানো হবে না। ‌ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সরাসরি বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এবং নৈহাটির বিধায়ক তথা বর্তমানে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এই দুই নেতার কাছ থেকে এই প্রশ্নের জবাব তিনি চেয়েছিলেন। এরপরই তিনি চলে গেলেন রায় পরিবারের দিকে। অর্থাৎ তিনি মুকুল-অর্জুন-শুভ্রাংশু ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেন। তিনি মুকুল রায় এবং শুভ্রাংশু রায়ের কাছে গেলেন বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে।

তবে বর্তমানে তিনি এখন আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং,বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা নেতা শুভ্রাংশু রায়। তাঁরা প্রথমে আসেন হালিশহর তেঁতুলতলা পার্টি অফিসে। যখন তাঁরা কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলছেন ঠিক সেই সময় সেখানে আসেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। ‌সঙ্গে ছিলেন বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। তবে যখন তারা বুঝতে পারেন যে এই পার্টি অফিসে সাংসদ অর্জুন সিং এবং শুভ্রাংশু রায় রয়েছেন সাথে সাথেই তারা সেখান থেকে চলে যান মৃত্যুঞ্জয় দাসের বাড়িতে। তবে সেই সময় তো মৃত্যুঞ্জয় দাস বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং এবং শুভ্রাংশু রায়ের সাথে তেঁতুলতলার পার্টি অফিসে। ফোন করে তাঁকে বাড়িতে ডাকা হলো। তিনি অর্জুন-শুভ্রাংশুকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। এরপর বাড়িতে ঢুকেই বন্ধ ঘরে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক হয়। এই বৈঠকে ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং,ছিলেন নৈহাটির বিধায়ক তথা মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, শুভ্রাংশু রায়,কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান কমল অধিকারী, হালিশহর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ, হালিশহরের টাউন সভাপতি প্রবীর সরকার। তাদের উপস্থিতিতে মৃত্যুঞ্জয় দাসকে এই গন্ডগোল মিটমাট করে নেওয়ার কথা বলা হয়।

কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন,এই ঘটনা নতুন নয়,এই নিয়ে তিনবার ঘটল‌। কেন মিমাংশা করব?

কিন্তু ওই বন্ধ ঘরের কিছু অন্য কাহিনী জানা গেছে সূত্র মারফত। এই বৈঠকে নাকি বর্তমান এবং প্রাক্তন বিধায়কের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।

সূত্রের আরো খবর যে, বিধায়ক সুবোধ অধিকারী শুভ্রাংশু রায়কে বলেছেন,”যা করতে হবে সব আমাকে জানিয়েই করতে হবে।২০১৯-এর পর কোথায় ছিলে?”

এরপর পাল্টা শুভ্রাংশু রায় বলেন,”এখন আপনি দল করছেন,পদে আছেন তাই এসব বলছেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে যখন আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় পেলাম,তখন আপনি কোথায় ছিলেন?”

সূত্রের খবর,এইরকমই বাকবিতণ্ডা আরও চলতে থাকে তাদের দুজনের মধ্যে। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক তাঁদের দুজনকে শান্ত করে বলেন, “এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় নয়।”

ঠিক তখনই সাংসদ অর্জুন সিং শুভ্রাংশু রায়কে সাথে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়,নিজস্ব গাড়িতে তাঁকে তাঁর কাঁচরাপাড়ার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসেন।

অন্যদিকে বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে বেরিয়ে যান।

আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন হঠাৎ করে অর্জুন সিং কেন শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন?

আগামীতে কোনদিকে যাবে এই বীজপুরের রাজনীতি? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই এই বিধানসভা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নানারকম জল্পনা-কল্পনা।

কারণ একজন কাউন্সিলর হেনস্থা হলেন,আর সাথে সাথে ছুটে আসলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং সহ সকল নেতৃত্বরা।

শুধু তাই নয়,বীজপুরের বর্তমান এবং প্রাক্তন দুই বিধায়কের মধ্যে চলল বাকবিতণ্ডা। তবে তাঁদের এই সমীকরণ কোন পথে এগোবে তা সময়ই বলবে।