অবতক খবর,১৩ জানুয়ারি: বীজপুরে এখন চলছে প্রোমোটারদের দৌরাত্ম্য। কাঁচরাপাড়া লক্ষ্মী সিনেমার উল্টোদিকে অর্থাৎ ৩৬,জাদেরবক্স লেনের প্রয়াত অসীম পালের সাবেকি বাড়িতে বসবাস আট থেকে আশির। অর্থাৎ বলা যায় একান্নবর্তী পাল পরিবার সেখানে বসবাস করেন। পাল বাড়ির পাশেই কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। সেটি যে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হচ্ছে তা নিয়েও বেশ কয়েকবার অভিযোগ উঠেছে। বেআইনি এই কারণেই বলা হচ্ছে কারণ কনস্ট্রাকশনেরও কতগুলি নিয়ম রয়েছে। কনস্ট্রাকশন চলাকালীন আশেপাশের বাড়িঘরের বা মানুষজনের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। কিন্তু এই কনস্ট্রাকশন সাইট দেখলে মনে হবে মানুষের সাথে জীবনের সাথে চলতে ছেলেখেলা। খরচের কথা মাথায় রেখেই হয়তো ওই কনস্ট্রাকশন সাইটের চারপাশ কাপড় দিয়ে বা চট দিয়ে না ঘিরে খোলাখুলিভাবে চলছে বিল্ডিং তৈরির কাজ। কিন্তু এই প্রোমোটাররা এইটুকু সাশ্রয় করতে গিয়েই যে কখন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে তা বলা মুশকিল।
আজ দুপুরে পাল বাড়িতে রান্নাঘরে রান্না করছিলেন মনিকা পাল। রান্নার মাঝেই তিনি বিশেষ কারণে অন্য একটি ঘরে অর্থাৎ ঠাকুর ঘরে যাওয়ার জন্য রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু যেই তিনি বেরোলেন তার সাথে সাথেই রান্নাঘরের টিনের চালের উপরে ওই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে বড় একটি বাঁশ এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই রান্না ঘরের চাল ভেঙে পড়ে যায়। রান্নাঘরের যা কিছু ছিল সব তছনছ হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতা দেখে হতভম্ব গোটা পাল পরিবার।
কার্যত কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রাণে বেঁচে গেলেন মনিকা পাল।
তিনি বলছেন, ঈশ্বরের কৃপায় তিনি দ্বিতীয়বার প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। আর কয়েক সেকেন্ড ওই স্থানে থাকলে, তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করতে হতো সেখান থেকে।
মনিকা পালের স্বামী চন্দন পাল জানান, “আজ যদি আমার স্ত্রীর কিছু হয়ে যেত তখন তার দায় নিতো কে? দিনের পর দিন এইরকমভাবেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে এই কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ। যদি কারোর এতটুকু দায়িত্ববোধ থাকতো তাহলে এত বড় কনস্ট্রাকশন নিশ্চয়ই এইরকমভাবে অর্থাৎ কোনরকম সেফটি ছাড়া হতো না। এখানে যে বাঁশগুলি বাধা হয়েছে সেগুলি যখন তখন রাস্তার মানুষের মাথায় পড়তে পারে। তাদের অসাবধানতার কারণে যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা, চলে যেতে পারে প্রাণ। শুধু তাই নয় ওই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে রাস্তায় জল,সিমেন্ট ইত্যাদি পড়ছে, মানুষের চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। আর কয়েক সেকেন্ড সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেই আমার স্ত্রীয়ের প্রাণটাও হয়তো চলে যেত। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি দেখেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরকমভাবে কি চলতে পারে? প্রশাসনের কি চোখ নেই? তাহলে আমরা আমাদের অভিযোগ নিয়ে কার কাছে যাবো? কোথায় গেলে মিলবে সদুত্তর? আমাদের কথা শুনবে কে? তবে কি এই ভাবেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমরা বসবাস করবো? নগর প্রশাসন,থানা প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। তবে কি তারাই মদদ দিচ্ছেন এইরকম বেআইনি কাজের?যা পরিস্থিতি তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে আশেপাশের মানুষের প্রাণনাশ পর্যন্ত হতে পারে। এমনই মনে করছি আমরা এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা। যেভাবে প্রমোটাররা সবদিক সেটিং করে বেআইনি কাজ করে চলেছে, তা যদি আগামীতে না বন্ধ হয় তবে এই ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটে চলবে হয়তো মানুষ হারাবেন তাদের প্রিয়জনকে।”