অবতক খবর ,হক জনি , মালদা :- সঞ্জয় রবিদাসকে মনে আছে? চাঁচলের কনুয়া এলাকার যে ছেলে জুতো সেলাই করে বাস্তবিকই চণ্ডীপাঠ করেছিল৷ বাবার অবর্তমানে চামড়া সেলাই করে সংসারের পেট চালানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা বহাল রেখেছিল কনুয়া হাইস্কুলের ফার্স্ট বয় সঞ্জয়৷
জুতো সেলাই করেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছিল সে৷ শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেতে চলেছে সঞ্জয়৷ রাজ্য সরকারের ওয়েস্টবেঙ্গল কমিশন ফর প্রটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের তরফে তাকে দেওয়া হচ্ছে ‘বীরপুরুষ’ পুরষ্কার৷ আগামী ২০ নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্র সদনে উত্তরবঙ্গের আরও ছয় বীরের সঙ্গে রাজ্যের শিশু অধিকার রাখা কমিশনের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হবে তাকে৷ সেকথা জানিয়েছেন জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি৷ একথা শোনার পর আনন্দে আত্মহারা সঞ্জয়৷ কনুয়া গ্রামের সঞ্জয় রবিদাসের বাবা জগদীশ রবিদাস ২০০৩ সালে মারা যান
৷ বাবার মৃত্যুর পর মা কল্যাণীদেবী জমিতে নিড়ানি দেওয়ার কাজ করে ছেলেকে মানুষ করতে শুরু করেন৷ পরবর্তীতে সঞ্জয়ও বাবার পুরোনো পেশা বেছে নেয়৷ কনুয়া বাজারে জুতো সেলাই করত সে৷ এদিকে ছোট থেকেই অসম্ভব মেধাবী সে৷ কনুয়া হাইস্কুলে বরাবর ফার্স্ট হয়৷ শিক্ষকরাও তাকে পড়াশোনায় সবরকম সাহায্য করতেন৷ এভাবেই ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৬৫ নম্বর পায় সঞ্জয়৷ এবার সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল৷ কিন্তু তার মধ্যেই দেশে হানা দেয় কোরোনা৷ শুরু হয়ে যায় লকডাউন৷ পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়৷ বন্ধ হয়ে যায় তার ব্যবসাও৷ সেই সময়ই তার খবর ইটিভি ভারতে প্রকাশিত হয়৷ পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, উচ্চমাধ্যমিকে সঞ্জয় ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে৷
সংবাদমাধ্যমে সঞ্জয়ের খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের৷ দপ্তরের পক্ষ থেকে তার নাম এবারের ‘বীরপুরুষ’ পুরস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়৷ সেই সুপারিশ গ্রহণ করে রাজ্য৷ দপ্তরের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি আজ জানিয়েছেন, চাঁচল ১ ব্লকের অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের সঞ্জয় রবিদাস এবার রাজ্য সরকারের বীরপুরুষ পুরস্কার পেতে চলেছে৷ আগামী ২০ নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্র সদনে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে৷
জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ের জন্যই তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে৷ এই খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত সঞ্জয়৷ সঞ্জয় রবিদাস বলে, ” এই খবর পাওয়ার পর থেকেই আমি খুব আনন্দিত, ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে,সাথে এও জানাই যে সে প্রখ্যাত নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের কলেজে ভর্তি হয়েছে | ” মা কল্যাণী রবিদাস সজলশ্ৰু চোখে বলেন, ” আমার ছেলে আমাদের গর্বিত করেছে, সরকারের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হবে শুনে আমি খুব আনন্দিত | ”
সঞ্জয়ের এই খবরে খুশির হাওয়া এলাকাজুড়ে, সমগ্র এলাকাবাসীই গর্বিত তাকে নিয়ে, এক এলাকাবাসী বলেন, ” খবরটা শুনার পর থেকে আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছি, রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ | “